স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো ও মান উন্নয়ন দরকার

| মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেছেন, ওষুধ কোম্পানি থেকে চিকিৎসকদের কমিশন নেওয়ার বিষয়টি অনৈতিক ও অবৈধ। তিনি বলেন, আমি নিজে একজন ডাক্তার। ডাক্তারদের কমিশন নেওয়া খালি ইমমোরাল না, ইললিগালও। কাজেই আমাদের রিপোর্টে ও রকম পিনপয়েন্ট না থাকলেও বিষয়টি থাকবে। তিনি বলেন, আপাতত কমিশন অংশীজনদের মতামত শুনছে। পরবর্তী সময়ে সেবাগ্রহীতাদের মতামত নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। একটি জনমুখী সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সভায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী প্রস্তাবনা এসেছে। এসব প্রস্তাব কমিশনের কাজের জন্য সহায়ক হবে। স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাতে জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে জনগণের কাছ থেকে পরীক্ষা ও ওষুধের খরচ যাতে বেশি রাখতে না পারে সেটি নিয়ে কাজ করছে কমিশন। আমাদের নিজেদের দক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, কিন্তু আরেকটু সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। রোগীকে চিকিৎসার বিষয়ে কিংবা ফলোআপের বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারলে বাইরে রোগী যাওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। সেসব বিষয়ে আমরা কাজ করব।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বীর উত্তম শাহ আলম মিলনায়তনে গত শনিবার অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাঁরা এ মন্তব্য করেন। সভায় উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে জেলাউপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতে সংস্কার চেয়েছেন অংশীজনেরা। একইসাথে মানহীন প্রাইভেট ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, চিকিৎসাখাতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করাসহ সরকারিবেসরকারি হাসপাতালের নানা সংকট আলোচনায় উঠে আসে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া অর্থনৈতিক প্রভাব যতটা তীব্র, ততটাই উদ্বেগের। একটি সাহসী ও বাস্তবসম্মত ধারণা হলো বাংলাদেশকে একটি মেডিকেল ট্যুরিজম হাব হিসেবে গড়ে তোলা। এর খরচসুবিধা এবং কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান ব্যবহার করে দেশটি প্রতিবেশী অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার রোগীদের আকৃষ্ট করতে পারে।

তাঁরা বলেন, পেশাজীবীদের মধ্যে ব্যবসায়ীরাই বেশি দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান। এসব ব্যবসায়ীর মধ্যে থাইল্যান্ড ও ভারতে যাওয়ার সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি। এরপর রয়েছে সিঙ্গাপুরের অবস্থান। গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ রোগের চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে যাচ্ছে মানুষ। কারণ চিহ্নিত হয়েছে ৮টি। এরমধ্যে শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগের চিকিৎসা, যা মোট রোগীর ১৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম যাচ্ছে চোখ ও দাঁতের চিকিৎসা করাতে, যা মোট রোগীর ২ শতাংশ করে। এছাড়া ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী কিডনি রোগের, ১১ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী অর্থোপেডিক সার্জারির জন্য, ১১ শতাংশ করে রোগী লিভার ও ক্যানসার রোগের, ৯ শতাংশ রোগী নিউরোলজি, ৬ শতাংশ রোগী গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও ইউরোলজি, ৫ শতাংশ রোগী নাককানগলা এবং ৪ শতাংশ করে রোগী জেনারেল সার্জারি ও গাইনোকোলজির চিকিৎসায় বিদেশে যাচ্ছে।

তাঁরা বলেন, সাধারণ মানুষের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতাকে কমানোর জন্য দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করতে হবে। এ খাতকে আরো ত্বরান্বিত করতে সরকার কর অব্যাহতির জন্য ইতোমধ্যে রাজস্ব বোর্ডের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। আর বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংস্কারের কাজ ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো এবং মান উন্নয়ন দরকার। জটিল রোগ নির্ণয় করার ক্ষমতা বাড়াতে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদির জোগান নিশ্চিত করতে হবে।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সাশ্রয়ী সেবার সঙ্গে চিকিৎসা পর্যটন খাতকেও সমপ্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য সরকারকে কর ছাড়সহ আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এছাড়া একটি জাতীয় বিমা স্কিম তৈরি করতে হবে যাতে জটিল সার্জারি ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসহ সব চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভবপর হয়। এতে মানুষ বিদেশে যাওয়ার চেয়ে দেশে চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠবে। অপরদিকে বিদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকে কম আকর্ষণীয় করতে কিছু নীতি বাস্তবায়ন করারও তাগিদ দেন তাঁরা। চিকিৎসা সেবায় কিছুটা উন্নতি হলেও অব্যবস্থাপনা ও মানসম্পন্ন চিকিৎসার ঘাটতি রয়ে গেছে। এসব ঘাটতি দূর করতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোর আধুনিকায়নও জরুরি। পাশাপাশি বিশ্বের নাম করা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে এই বিপুল অর্থ দেশে রাখা সম্ভব। বহুদিন ধরে স্বাস্থ্যখাতে যে অনিয়ম চলে আসছে, সেটি দূর করে স্বাস্থ্যসেবায় মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে