পটিয়া পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুলের একমাত্র পুত্রকে করোনা টিকা না দিয়ে অবহেলার ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামিউল ইসলাম। গত ১২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে এ সুপারিশ করা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের অনুমোদন রয়েছে। ওই পত্রে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন) দৃষ্টিও আকর্ষণ করা হয়।
এদিকে গতকাল শনিবার পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুল তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্ট পটিয়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।
জানা যায়, পটিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আইয়ুব বাবুলের একমাত্র পুত্র আতিক শাহরিয়ার মাহি ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি মারা যান। গত বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) তার মৃত্যুর দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। মাহি পটিয়া সরকারি কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এইচএসসি শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। পৌর মেয়র আইয়ুব বাবুল চিকিৎসকের অবহেলাজনিত কারণে ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। ওই ঘটনার পর পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সব্যসাচী নাথ ও তাৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিচার চেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মেয়র। কিন্তু অভিযোগ দায়েরের পর দুই বছর পার হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
মেয়র বলেন, তার পদ মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা ও নানা অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তার সাথে সাবেক ইউএনও এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। আর এ দূরত্বের বলী হয়েছে তার একমাত্র পুত্র মাহি। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কয়েক দফায় করোনার টিকা দেয়ার জন্য হাসপাতালে নেয়া হলেও নানা অজুহাতে তার একমাত্র পুত্রকে টিকা দেয়া হয়নি। ফলশ্রুতিতে তার পুত্র করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ইউএন’রও বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রতিবাদের মূল্য দিতে হয়েছে তার পুত্রের জীবন দিয়ে। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ও তদন্ত সম্পন্ন হলেও দাপ্তরিক কোনো ব্যবস্থা এ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পটিয়ায় কর্মরত আছেন বহাল তবিয়তে। মন্ত্রণালয়ে সচিবকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরের একটি পত্রের অনুলিপি কয়েকদিন আগে তার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ বলেন, মেয়র পুত্রেকে টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে আমার কোনো অবহেলা ছিলো না। যেহেতু এটা তদন্ত হওয়া একটি বিষয়, তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা টিক হবে না। কর্তৃপক্ষের নিষেধ রয়েছে।
এদিকে মাহির ২য় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিল ও নানা কর্মসূচি পালিত হয়।