ঢাকার ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগে করা হত্যা মামলার তদন্ত কোন পথে এগোবে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই কিশোরকে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি ছিল কিনা এমন টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বিশিষ্ট ব্যক্তিরাই ভালো বলতে পারবেন জানিয়ে বুধবার ধানমন্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা চলাকালীন গত ২৩ জুন ঢাকার এই হাসপাতালে ১৭ বছর বয়সী তাহসিন হোসেন নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। পরে ২৬ জুন তার বাবা মনির হোসেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন। পরে আদালত তা গ্রহণ করে হত্যা মামলা করতে ধানমণ্ডি থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়। থানা পুলিশ ওইদিনই দণ্ডবিধির ৩০২, ৫০৬ এবং ৩৪ ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত করে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের সার্জন ডা. মো. সাইফুল্লাহ, সহকারী সার্জন ডা. মাকসুদ, ডা. সাব্বির আহমেদ, ডা. মোশাররফ, ডা. তাজরিন ভূইয়া ও হাসপাতালের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. শাহজাহান। ওসি পারভেজ বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে একটি কমিটি গঠন করে পুরো ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন চেয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই প্রতিবেদন পেলেই পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতা চেয়ে ঈদের ছুটি শুরুর আগের দিন চিঠি দেওয়ার হয়েছে; তাদের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে কবে নাগাদ প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা না দিয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে চিঠি দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে আবার ঈদের বন্ধ ছিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, তারা এখনও কোনো চিঠি পাননি।
গত ২৭ মার্চ অবস্ট্রাক্টিভ স্মল গাট বা নাড়ির প্যাঁচ রয়েছে বলে তাহসিনকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথম দফা অস্ত্রোপচার করার পর উন্নতি না হওয়ায় দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনের কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় বলে মনির হোসেন মামলায় অভিযোগ করেছেন। দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করার পরেও কোন উন্নতি না হলে বিষয়টি জানতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো সদুত্তর দেননি। প্রায় তিন মাস চিকিৎসা চলার পর ২৩ জুন তার মৃত্যু হয়।
মনির হোসেনের অভিযোগ, তিন মাস ধরে ল্যাবএইড হাসপাতালে রেখে তার ছেলের অপচিকিৎসা হয়েছে। তবে মামলার বিষয়ে সে সময় ল্যাবএইড হাসপাতালের এমডি ডা. এ এম শামীম বলেছিলেন, যেহেতু মামলা হয়েছে সে কারণে তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। মামলার আবেদনে বলা হয়, তিন মাসে তাহসিনকে ১৪৪ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ২৭ লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়। এর মধ্যে দশ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে হাসপাতাল থেকে সন্তানের লাশ নিয়ে তিনি দাফন করেন।
কিশোর তাহসিনের সঠিক চিকিৎসা সম্ভব না জানার পরও অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য হাসপাতালের আইসিইউতে আটকে রেখে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে। মৃত্যুর পরে আপস মীমাংসার প্রস্তাবও দেওয়া হয় বলে মনির হোসেন অভিযোগ করেছেন।