চট্টগ্রাম মহানগরীতে পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের আরো দুটি ক্যাচমেন্টের ৪ হাজার কোটিরও বেশি টাকার একটি প্রকল্প সোমবার একনেকে অনুমোদন পেয়েছে বলে দৈনিক আজদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে। ঐতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভূমি অধিগ্রহণের দু হাজার কোটি টাকার অপর একটি প্রকল্পের অনুমোদনের পরই স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কালুরঘাট ও বাকলিয়া অংশের কাজ শুরু হবে। ইতোপূর্বে শুরু হওয়া কাচমেন্ট–১ এর কাজ ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ফ্রাসের উন্নয়ন সহযোগী–সংস্থা এএফডির অর্থায়নে কাট্টলী এলাকার ক্যাচমেন্ট–৫ এর ২৭’শ কোটি টাকার অপর একটি প্রকল্প আগামী একনেকে অনুমোদন হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীকে ৬টি পৃথক ক্যাচমেন্টে বিভক্ত করে নেওয়া পরিকল্পিত স্যুায়ারেজ প্রকল্পের কাজ ক্রমে গতি পাচ্ছে।’
১৯৬৩ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে। কিন্তু এই ৬১ বছরেও পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয় স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবারিত হয়নি। কয়েক বছর আগে উদ্যোগ গ্রহণের পরেও এই ধরনের প্রয়োজনীয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন এখনো ঘটলো না। যদিও কাজ শুরু হয়েছে ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৭০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস চট্টগ্রাম মহানগরীতে। বিপুল সংখ্যক মানুষের এই নগরীতে পরিকল্পিত কোনো স্যুায়ারেজ প্রকল্প ছিলনা। মানুষের বাসা–বাড়িতে সেপটিক ট্যাংকে ময়লা জমা হয়। এছাড়া প্রতিদিন নগরীতে তার ২৮৮ মিলিয়ন লিটার বর্জ পানি নিঃসৃত হয়ে নদীতে পড়ছে। ২০৩০ সালে এর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রতিদিন ৫১৫ মিলিয়ন লিটারে। এছাড়া নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫৩৯ ঘনমিটার ফিক্যাল স্লাজ সেপটিক টাংকে জমা হচ্ছে, যা আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ৭১৫ ঘনমিটার হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
২০২২ সালে যখন প্রকল্পটি শুরু হয়, তখন বলা হয়েছিল এটি বাস্তবায়ন হতে চার বছর সময় লাগবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য সুরক্ষার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা আধুনিক সিটির এধান শর্ত। প্রকল্পের, পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম বলেছেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি চট্ট্গ্রামকে বিশ্বমানের নগরীতে পরিণত করার যাত্রা অনেকটা এগিয়ে দেবে।
ওয়াসা মানে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম ওয়াসা শুধু পানি সরবরাহ করে এসেছে এতো বছর। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বলে কিছু ছিল না। মহানগরীর পায়োবর্জ্য গিয়ে দূষিত হওয়া কর্ণফুলী রক্ষায় ওয়াসাকে স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণ করতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা এসেছিল ২০১৭ সালে। তার ধারাবাহিকতায় শুরু হয় এই প্রকল্প।
স্যুয়ারেজ প্রকল্প যত দ্রুত শেষ হবে, তত দ্রুত আমরা কর্ণফুলী ও হালদা নদীসহ পরিবেশকে অনেক ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারবো। স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নগরবাসীকেও ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রকল্পের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রণা মেনে নিতে হবে। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য, যত ভোগান্তি হোক না কেন; নগরবাসী বৃহৎ স্বার্থে সহ্য করবে।
চট্টগাম শহরের নর্দমার ব্যবস্থাও খুবই শোচনীয়। নগরীর অপরিকল্পিত সম্প্রসারণের কারণে ঘিঞ্জি এলাকাগুলোর অনেক জায়গায় নর্দমার পানি রাস্তায় গিয়ে গড়ায়। নর্দমাগুলোর বেশিরভাগই সংরক্ষণ ও পরিচর্চার অভাবে বিভিন্ন বর্জ্যে নালামুখ আটকে থাকে। সবমিলিয়ে একটা অসহনীয় পরিস্থিতি। তাই নর্দমা ব্যবস্থাপনারও উন্নতি ঘটাতে হবে।