জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিতে পপসম্রাট আজম খান, স্যার ফজলে হাসান আবেদ, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদসহ সাতজনকে এবার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার দিচ্ছে সরকার। সেই সঙ্গে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেওয়া মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত রহিত করা হয়েছে। এছাড়া
১৯৮৫ সালে স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীর নাম ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনে এবারের পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে। এবারের তালিকার সাতজনের মধ্যে ছয়জনই মরণোত্তর এ সম্মাননা পাচ্ছেন। কেবল শিক্ষা ও গবেষণা ক্যাটাগরিতে বদরুদ্দীন উমর জীবদ্দশায় এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তবে তিনি আগেই এক বিবৃতির মাধ্যমে পুরস্কার গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে এবার প্রতিবাদী তারুণ্য নামে নতুন একটি ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে ছয় বছর আগে ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্যাতনে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। খবর বিডিনিউজ ও বাসসের।
পুরস্কারের জন্য মনোনীত বাকিরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম, সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (কবি আল মাহমুদ), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ, সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ, মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ( পপ সম্রাট আজম খান)। তারা সবাই মরণোত্তর এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা, ৩ লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
জিয়ার পুরস্কার পুনর্বহাল : বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৩ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে থাকা জিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশ–জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সময়ে তার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। ২০০৫ সালে হাই কোর্টের এক রায়ে ওই সংশোধনী অবৈধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৬ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জিয়ার স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে জাতীয় জাদুঘর থেকে তার পদকটি সরিয়ে নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে দেওয়ার কথা জানিয়ে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের যে রায়ের পটভূমিতে ২০১৬ সালে সরকার জিয়াউর রহমানের পুরস্কার বাতিল করে, ওই রায়ে পুরস্কার বাতিলের কোনো নির্দেশনা না থাকায় মুক্তিযুদ্ধে তার অসাধারণ অবদান বিবেচনায় স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত সরকার রহিত করেছে।