বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধার মিশেলে উদযাপিত হলো এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হেনরি কিসিঞ্জার একদিন যে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দিয়ে উপহাস করেছিলেন, সেই বাংলাদেশই আজ বিশ্বের কাছে রোল মডেল। অর্থনীতি, প্রযুক্তি, কৃষি, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্প, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বের দরবারে বাঙালির মান উজ্জ্বল করে চলেছে। তাই বন্দরনগরী চট্টগ্রাম কিংবা রাজধানী ঢাকা-ই শুধু নয়, দেশ জুড়েই লেগেছিল লাল-সবুজের উৎসব।
শহীদ মিনারে গত শনিবার সকালে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। জাতীয় সংগীতের সুরে এককণ্ঠ হয়েছে সবাই। চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিরা আবেগদীপ্ত কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন, ‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে/আমি নয়ন জলে ভাসি’।
নগরীর আনাচে কানাচে বেজেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণ ও দেশাত্মকবোধক গান। দিনটি উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, এফএম রেডিও, সরকারি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। সংবাদপত্রগুলোয় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে।
মহানগর আওয়ামী লীগ : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেও নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস। এই নাগিনী অভিনয় ও ছল কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ৭১’এর পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দিতে চায়। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখনো বেঁচে আছি আমাদের উত্তসূরীদের আহ্বান জানাই আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের জন্য। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন বলেন, বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্বের শিকড় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন নানা পেশার জনগণ। যাদের রাজনীতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, তারা অবশ্যই বাঙালী ছিলেন। শনিবার মহান স্বাধীনতা দিবসে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দারুল ফজল মার্কেটস্থ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং খতমে কোরআন ও মিলাদ-মাহফিল শেষে বড়পোল হালিশহরস্থ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, সফর আলী, শেখ মাহমুদ ইছহাক, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, শফিকুল ইসলাম ফারুক, সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, মোঃ হোসেন
প্রমুখ।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ : মহান স্বাধীনতা দিবসে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু মঞ্চে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও সকাল সাড়ে ৮ টায় মিউনিসিপাল স্কুলে নির্মিত অস্থায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার, দেবাশীষ পালিত, মো. মোস্তফা, আলাউদ্দিন সাবেরী, জাফর আহমেদ, সরোয়ার হাসান জামিল, গোলাম রব্বানী, বখতেয়ার সাঈদ ইরান, আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ, দিলোয়ারা ইউসুফ, এড. বাসন্তী প্রভা পালিত, রাশেদ খান মেনন, রূপক কান্তি দেব অপু, তানভীর হোসেন তপু, রেজাউল করিম প্রমুখ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন : চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদা ও বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণের শেখ রাসেল চত্বরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনের শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, জেলা পুলিশ সুপার এস.এম রশিদুল হক, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামালসহ সিভিল সার্জন, শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমিসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ এসময় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১১টায় এম.এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে আলোচনা সভা, নগরী ও জেলার ৩০৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ক্রেস্টসহ উপহার দিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সহকারী কমিশনার (ভূমি-পতেঙ্গা) জিসান বিন মাজেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক, রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, পুলিশ সুপার এস.এম রশিদুল হক, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ ও জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সারোয়ার কামাল দুলু। দিবসটি উপলক্ষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টয় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদেও মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।