আনোয়ারার শঙ্খ নদী লাগোয়া গ্রামটির নাম তৈলারদ্বীপ। এই গ্রামের হাই স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলছে ১৫ জন কিশোরী। সবার পরনে বুট আর সাদা-নীল জার্সি। গ্রামের মাঠে কিশোরীদের এমন ফুটবল খেলার অনুশীলন ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের ফুটবলকন্যাদের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
তৈলারদ্বীপের এই কিশোরীরা নিলুফার কায়সার স্মৃতি মহিলা ফুটবল একাডেমির সদস্য। একদিনে এই একাডেমি হয়ে উঠেনি। বঙ্গমাতা স্কুল টুর্নামেন্টের সাফল্য থেকে নজরে আসে ফাহিমা সুলতানা। এরপর একজন থেকে কয়েকজন। এভাবে পুরো একটি টিম। খবর বিডিনিউজের।
সম্প্রতি অনুশীলন করছিলেন এ দলের অধিনায়ক ফাহিমা সুলতানা। কথা হতে জানালেন, ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল তার। ফাহিমা বলেন, ‘স্বপ্ন দেখতাম একদিন আমিও মাঠ দাপিয়ে ফুটবল খেলবো। কিন্তু তা হয়ে উঠত না। এরই মাঝে শুনলাম স্কুল পর্যায়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট হবে। আগ্রহ থেকে নাম জমা দিই, খেলিও। সবাইকে তাক লাগিয়ে আমরা সেইবারে চ্যাম্পিয়ন হই।’
এরপর নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করে এই কিশোরীরা। ফাহিমা বলেন, বছরে একবার টুর্নামেন্টে নিয়ম রক্ষার খেলায় সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে আমাদের ফুটবল খেলার স্বপ্ন। তাই একদিন এলাকায় স্থানীয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব আজিজুল হক আজিজ ও মো. এরশাদকে বিষয়টা জানাই। তাঁরা আমাদের একাডেমি করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখালেন। স্বপ্নটি আমাদের সহসা পূরণ হলো। তারপর আমি স্কুল থেকে আমার মত আরও যারা খেলতে আগ্রহী তাদের তালিকা সংগ্রহ করে অনুশীলন শুরু করলাম। সবার পরিশ্রমে আজ আমরা চট্টগ্রামে একমাত্র মহিলা ফুটবল একাডেমি। প্রতিযোগিতায় পুরো চট্টগ্রামে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ঢাকার বিভাগীয় পর্যায়ে খেলছি, সিলেটে খেলছি। তাছাড়া আমাদের একজন বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়েছে। এভাবে আমরা একদিন দেশের হয়ে বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা উচিয়ে ধরবো। ওই দলে ফাহিমার সাথে খেলেন সাদিয়া তাবাসসুম, তানজিনা খানম, শ্রিপা দাশ, পূর্ণিমা দাশ, জান্নাতুল মাওয়া রিকি, তাহিয়া সুলতানা, আলিয়া আকতার, সানজিদা সুলতানা, মনোয়ারা বেগম মনি, পূজা দাশ, অন্তু দাশ, দিলরুবা খানমসহ আরও এগার জন।
তৈলারদ্বীপ এরশাদ আলী হাইস্কুলের মাঠে সপ্তাহে তিনদিন অনুশীলন করে তারা। তাদের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবাহনী ফুটবল দলের সাবেক গোলরক্ষক ও ফুটবল কোচ মো. আলী। এই মহিলা ফুটবল একাডেমির দুই উদ্যোক্তা স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল হক আজিজ ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব মো. এরশাদ একাডেমির চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত এই দুজনই ব্যক্তি পর্যায়ে সহায়তা নিয়ে ফুটবল খেলার স্বপ্ন দেখা মেয়েদের নিয়ে একাডেমি গড়েছেন। তাদের খেলার বুট-জার্সি দিয়েছেন।
একাডেমির নামকরণ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের স্ত্রী মরহুমা নিলুফার কায়সারের নামে। তিনি
সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খানের মা। নিলুফার কায়সার মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী ছিলেন।
কিশোরী ফুটবল দলটিকে নিয়ে কথা হওয়ার সুযোগ হলো কিশোরী ফুটবল চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি এই ফুটবলকন্যাদের কথা ইতোমধ্যেই জেনেছেন বলে জানালেন। তিনি দলটির প্রশংসা করে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, তারা অঙ্গীকারবদ্ধ ও আন্তরিক। একজন খেলোয়াড় হওয়ার জন্য এই গুণগুলো আবশ্যক। তাদের পাশে আমি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা সবসময় থাকবে। তাদের যে ধরনের সহায়তা দরকার তা আমাদের জানালে আমরা সর্বোচ্চভাবে পাশে থাকবো।