স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল রফিকুল দম্পতির

ট্রেন কেড়ে নিল সন্তান রিপনের জীবন ।। এসাইনমেন্ট জমা দিয়ে আসার পথে দুর্ঘটনা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১ জুলাই, ২০২১ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

সংসারে টানাপোড়ন। এরপরও একমাত্র ছেলের পড়াশুনা বন্ধ করেনি। ছেলেও মনোযোগী। ক্লাস ওয়ান, ক্লাস টু করে উঠেন ক্লাস টেনে। একটু একটু করে ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন বড় হতে থাকে মা-বাবার। ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করবেন। কিন্তু বাবা রফিকুল ইসলাম ও মার স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ালো চলন্ত ট্রেন। ঘাতক এ ট্রেন কেড়ে নিল তাদের আদরের সন্তান রিপনের জীবন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে কান্নাজড়িত কন্ঠে এসব কথা বলেন রফিকুল ইসলাম। রিপন এ কে খানের মির্জা আহাম্মদ ইস্পাহানী স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলের বেতন ও এসাইনমেন্ট জমা দিতে সকাল ১০ টায় বাসা থেকে বের হয়েছিল। স্কুলে গিয়ে তা করেছেও। পরে এ কে খান রেল বিট হয়ে বাসায় ফিরছিল। ট্রেন আসছে হয়তো বুঝে উঠতে পারে নি। ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় মো. সাজ্জাদ নামের এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। গতকাল বুধবার দুপুৃর সাড়ে ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মেডিকেল থেকে ফোন পেয়ে মর্গের সামনে একে একে হাজির হন আশিকুল ইসলাম প্রকাশ রিপনের বাবা রফিকুল ইসলাম, মা অকেনা বেগম, বড় দুই বোন রোমিনা আক্তার, আরিফা আক্তার ও চাচা মো. ইব্রাহীম। মর্গের সামনেই তারা তাদের আদরের রিপনের মৃত্যুতে আহাজারি করছেন। বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলে কয়েকদিন ধরে স্কুলে যাওয়ার জন্য পাগলামি করছিল। বেতন দিতে হবে, এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে এ জন্যে। করোনার কারণে তার মা যেতে বারণ করাই বাসা থেকে বের হয়নি। বুধবার সকালেও সে স্কুলে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। ভারি বৃষ্টি থাকায় তার মা ফের তাকে বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করে। কিন্তু এবার সে কথা শুনেনি। দ্রুত ফিরে আসবে বলে বাসা থেকে বের হয়ে পড়ে।
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তাকে ৫ হাজার টাকা স্কুলের বেতন হিসেবে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বোন আরিফা বলেন, আমাদের ভাই খুবই আদরের এবং মেধাবীও। দুষ্টুমি করলেও তাকে কখনো আমরা বকাবকি করিনি। তাকে নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। পড়াশুনাতেই তার আগ্রহ ছিল বেশি। অন্য ছেলেদের মতো এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতো না। আরেক বোন রোমিনা আক্তার বলে উঠলেন ‘বাবার স্বপ্ন অধরাই থাকলো’।
আশিকুল ইসলাম রিপন তার বাবা মায়ের সাথে এ কে খান রেল বিটের পাশের এলাকায় থাকতো। তারা তিন ভাই বোন। সে সবার ছোট। তার দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। তার বাবার গ্রিল ওয়ার্কশপ রয়েছে। এখান থেকেই চলে তাদের সংসার। তাদের গ্রামের বাড়ি বি-বাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত
পরবর্তী নিবন্ধনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে সিএনজি চালক-যাত্রীর করুণ মৃত্যু