স্পর্শ

আফিস উদ্দিন রিজভী | সোমবার , ২৪ জুলাই, ২০২৩ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

অনেকদিন গল্প না লেখার কারণে নিজের ভেতর এক ধরনের ডিসকোরামেন্ট কাজ করা শুরু করছে। বিশ্বাসহীনতার এই দেয়াল দিনের পর দিন ক্রমশ পুরু হয়েই উঠছে। কিন্তু একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে নিজেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা কাজে জড়িয়ে রাখার কারণে গল্পের মতো একটা জিনিসকে নিয়ে ভাবার কোন সময় আমার হাতে ছিলো না।

আমি তো কোন তুখোড় গল্পকারও নই, যে গল্প না লিখলে আমার জীবনে হাতিঘোড়া টাইপের কোন পরিবর্তন এসে যাবে। মাঝেমধ্যে এলোমেলো কয়েকটা গল্প লিখি যার বেশিরভাগই নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের অভাবে কাউকে দেখানো হয় না।

গত ছয় মাস আগে একটা গল্প পত্রিকার এক সম্পাদককে পাঠিয়েছিলাম, যার কাছে পাঠিয়েছিলাম সে আমাকে পনেরো দিন পর বলতেছে, ভাই আপনাকে দিয়ে আর কিছু হয়তো হবে কিন্তু গল্প লিখার কাজটা আপনি ছেড়ে দেন!

আমি কিছু বলিনি। মানুষটা খারাপ কিছু বলেনি। একটা গল্পকে সাহিত্যের মানদণ্ডে দাঁড় করানোর জন্য ঠিক যেমনটা করে তুলতে হয় ঠিক তেমনটা করে হয়তো আমি তুলতে পারিনি।

ভাবছি নতুন একটা গল্প লিখবো, কিন্তু গল্পের কোনও সত্যিকারের চিত্র আমার হাতে নেই। যেসব বিষয়ের উপর গল্প রচনা করবো ভাবছি তার জন্য দরকার সাহিত্যের নানা ফাঁকফোকড়ের ভেতর দিয়ে নিজের গল্পকে দাঁড় করানোর কৌশল, যার অনেক কিছুই কমতি আছে আমার ভেতর। নিজের সীমাবদ্ধতাকে ডিঙিরে একটা গল্প লিখবো বলে যখন অবশেষে ঠিক করলাম তখন খেয়াল করি আমাকে দিয়ে হচ্ছেনা। ল্যাপটপের স্ক্রিনে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকি, কিছুই লেখা হয় না।

এমন সময় আমার জীবনে আরো অনেকবার এসেছিলো; তখন আমি সাহায্য নিতে যেতাম আমার বন্ধু সুমনের কাছে। সুমন ফিল্মের মানুষ। কিন্তু সে জাহাঙ্গীর নগরে এনথ্রোপলজিতে পড়ছে। তার সাথে দেখা করা যেত পারে। তাকে ফোন না দিয়ে সরাসরি তার কাছে চলে গেলাম।

পুরো ঘটনা খুলে বলি সুমনকে। সুমন বলল, তোর দাদি? ওনার গল্পটা তো লিখতে পারিস। লিখবি লিখবি করতেছিস অনেকদিন ধরে…. মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ওঠা দারুণ গল্প হতে পারে।

আমি কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে যাই। আসলেই আমি দাদিকে নিয়ে একটা গল্প লিখবো, এমন একটা প্রতিশ্রুতি নিজেকে দিয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের নানা পাকচক্রে পড়ে আর হয়নি। এমন অসময়ে আমি চাইলে দাদির সেই গল্পের সাহায্য নিতেই পারি!

দীর্ঘদিন দাদির সাথে কথা হয় না। মা’কে ফোন দিলে বলে দাদি ভালো আছেন। পাগলামি দিনদিন বেড়েই চলছে, ডাক্তার লাগিয়ে রাখা হয়েছে।

একটা সময় ছিলো, যখন আমার দাদি ছিলেন তুখোড় একজন পাঠিকা। দাদির বিছানার পাশে থাকতো গাদাগাদা বই। আমি তখন অনেক ছোট। মাটিতে বসে পা লম্বা করে টেনে ভাত খেতাম। দাদি আমাকে দেখে হাসতেন। বলতেন, নাতি, তোর হউরো বাড়ি হইবো মেলা দূরে।

আমার কিশোর মন শশুড় বাড়ি দূরে হওয়ার কারণটা ধরতে পারতো না। কিন্তু একটা কৌতূহল দাদি আমার ভেতর জাগিয়ে দিয়েছিলেন। কথাটা বলতেন, আমি যখন পা টেনে বসে ভাত খেতাম, তখনই। পা টেনে বসে ভাত খেলে শশুড় বাড়ি দূরে হওয়ার যোগসূত্র দাদি কিভাবে দাঁড় করিয়েছেন আমি বুঝতে পারি না।

আমি যখন নবম শ্রেণিতে উঠি, সংবাদটা দাদিকে দিতেই দাদি খুশিতে ফেটে পড়লেন। দাদি ডেকে পাশে বসালেন আমাকে। বলতে শুরু করলেন দাদির নবম শ্রেণিতে উঠার পরের গল্প।

কিরণ নামের এক যুবক প্রেমে পড়েছিলো দাদির। দাদি যখন স্কুলে যেতেন, পেছন পেছন হাঁটত কিরণ। দাদির চোখে চোখ পড়লেই লজ্জায় লাল হয়ে যেতো সেই যুবক। দাদি ইছামতীর তীরে গোসলের সময় দূরে লুকিয়ে থাকতো কিরণ। দেখার চেষ্টা করতো দাদিকে। মাঝেমধ্যে উধাও করে ফেলতো দাদির শাড়ি, গামছা। দাদি নিজেকে লুকাতে জানতেন। দাদি জানতেন সেই যুবক ছাড়া আর কেউ লুকায় না তার শাড়ি। কিন্তু কোন এক অভিনব কৌশলে দাদির ভেতরে অনেকটাই জায়গা করে নিয়েছিলো সেই যুবক।

যুবকের চোখ দাদির চোখে পড়লেই দাদির ভেতর দুলে উঠতো আশ্চর্য এক হাওয়া। একটু একটু করে গলে যাওয়া শুরু করল দাদির বুকের ভেতর চেপে থাকা পাথর। নবম শ্রেণিতে পড়া আমার কিশোরী দাদি পড়ে যায় অচেনা এক যুবকের প্রেমে। দাদি আসলে প্রেমে পড়ার মতোই সুন্দরী ছিলেন। হাজার হাজার মানুষের ভেতর থেকে দাদিকে আলাদা করে বেছে নেওয়া যেতো। দাদিকে দেখলেই এলাকার যুবকেরা গেয়ে উঠত,

তুমারে দেখিলে আমার পরাণ কেমুন করে অসুন্দরী

এলাকার যুবকদের এমন গান দাদির পরিচিত। দাদি সেই যুবক প্রেমিকের কাছে সেইসব গানের গল্প করতেন। ভয় পেতো যুবক। তার মনে হতো, কোন কারণে যদি তার এই সুন্দরী প্রেমিকাকে হারিয়ে ফেলতে হয়! যুবকের মন মানে না। দাদিকে দিয়ে ফেলে বিয়ের প্রস্তাব।

আমি দাদিকে বলি, দাদি তুমিতো মানুষ ভালো না। অল্প সময়ের মধ্যেই তুমি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে? তুমি তো তখন মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ো।

দাদি বলে, ঘোড়ার ডিম, আমিতো বিয়ে করবো বলিনাই। সেই ছেলেই তো আমার আব্বারে প্রস্তাব দিতে আসছিলো।

দাদির বাবা রাজি হয় না বিয়েতে। দাদি তার বাবাকে রাজি করাতে তৈরি করে একটা পুরনো ফাঁদ। অভিমান করে দাদি ভাত খাওয়া ছেড়ে দেয়। মেয়ের অভিমানে মনের বাঁধ ভেঙ্গে যায় বাবার। কিরণ নামের সেই যুবক প্রেমিক প্রস্তুতি নিতে থাকে বিয়ের। পড়াশোনার ইতি টেনে দেয় দাদি।

আচ্ছা দাদি, তুমি আরো পড়াশোনা করলে কি হইতো? তোমার যে জ্ঞান, তুমিতো মন্ত্রী হয়ে যেতে পারতা।’

দাদি হাসে। আমি তখন আর ছোট নেই। পা লম্বা করে টেনে আর ভাত খাই না। ক্লাস নাইনে উঠে গিয়েছি। বড় চাচা মারা যাওয়ার পর, বড় চাচার পরিবার চলে যায় শহরে। দাদির বেশির ভাগ সময়ই মন খারাপ থাকে। দাদির মুখে হাসি দেখে আমি নিজেও কিছুটা খুশি হই।

দাদি বলে, নাতি প্রেমে পইড়া গেছিলাম রে। প্রেমে পড়ে যাওয়ার কারণে আর পড়াশোনা হয়নি।

প্রেমে পড়লে বুঝি পড়াশোনা হয় না? আমার এমন প্রশ্নে দাদি কিছুটা নরম হয়, বিষন্ন হয়ে যেতে থাকে দাদির মুখ। দাদির বিষন্ন চেহারা দেখে আমার খুব কষ্ট হত।

কিরণ নামের সেই যুবকের বিয়ের দিন ক্রমশ এগিয়ে আসে। দাদির কাছে প্রতিদিন পৌঁছাতে থাকে নতুন নতুন উপহার। একদিন দাদির কাছে আসে একটা চিঠি। চিঠিতে দাদিকে একবার নদীর পাড়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। বাবার অনুমতি পেয়ে যায় দাদি। একটা চাপা উত্তেজনা সবার ভেতর। নতুন জামাই হঠাৎ করে এভাবে ডাকার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাদের কিছুটা পুরনো ধারণা আছে। দাদির বাবা ভেবেছে, বিয়ে আর হচ্ছে না। দাদির মা অজু করে বসে যায় জায়নামাজে, যেনো বিয়ে না ভাঙ্গে।

ইছামতীর মাতাল হাওয়ায় আমার কিশোরী দাদির চুল উড়ে। দাদি শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে রাখে নিজের মুখ। দূর থেকে ভেসে আসে ইঞ্জিনের শব্দ। ইছামতীর তীরে এসে আঁচড়ে পড়ছে ঢেউ। ছলাৎ ছলাৎ পানির আঁচড়ে পরার মোহময় সুরে এগিয়ে আসে দাদির প্রেমিক। শুরু করে তাদের গোপন পরিকল্পনার আলাপ।

আফিয়া তুমি আম্মাআব্বারে ছাড়া থাকতে পারো?

দাদি ছোট ছোট করে বলে, এটা কেমুন কথা? বিয়ে হয়ে গেলে তো আপনার ঘরেই যাওন লাগবো।

দাদির প্রেমিক হাসে, বলে, বুঝছ আফিয়া, পরিস্থিতি বালা না। শেখসাব তো গ্রেফতার হয়ে গেছে, কাইলক্যা রাইতে ধইয়া নিয়া গেছে আমার বন্ধু সুজনেরে। দেশের তো অবস্থা বালা না। কি অইতে কি অয়!

দাদি বলে, দেশে যুদ্ধ অয়বো। চলেন আমরা বিয়্যা কইরা ইন্ডিয়া চইল্যা যাই।

কিরণ রেগে যায়, বলে, আফিয়া তুমারে আমি এমন ভাবি নাই, দেশের ছেলে দেশ ছাইড়া যামু কই? যুদ্ধ করুম। বিয়াক খানকির পুলাগোরে মারুম।

দাদি শাড়ীর আঁচল ছেড়ে দেয়। চোখ তুলে তাকায় দাদির সেই সাহসী প্রেমিকের দিকে। শীতল দুটো চোখ চেয়ে আছে দাদির দিকে। দাদি বুঝতে পারে, এই দুটো চোখ আর কিছুদিন পরেই দাদিকে দেখবে আরো কাছ থেকে। যে চোখ দিয়ে দিনের আলোয় যতটুকু দেখা যাচ্ছে না, সেই চোখ দিয়ে দাদিকে পুরোপুরি দেখে নিবে অন্ধকারে।

দাদির লজ্জা লাগে, বলে, আইচ্ছা আপনি যেমুন বলেন, তেমুন হইবো। অহন যাই।

দাদির বিয়ের তারিখ পিছিয়ে যায়। ভালোবাসার মানুষকে কাছে না পাওয়ার তীব্র শোকে দাদি মন খারাপ করে থাকে সারাক্ষণ। দেশের অবস্থা ভয়ঙ্কর। চারদিকে যুদ্ধ, লাশ আর লাশ। দাদি ভয়ে ইছামতীতে গোসলে যায় না। লাশের ভিড়ে ডুব দেওয়ার জায়গা থাকে না নদীতে।

এমন অসময়ে একদিন গভীর রাতে দাদির কাছে এসে উপস্থিত হয় সেই যুবক, যার সাথে দাদির জীবনের সমস্ত যোগসূত্র। যুবকের কাঁধে রাইফেল। বস্ত্রহীন প্রেমিকের দিকে তাকিয়ে হতবিহ্বল হয়ে যায় দাদি। লুঙ্গিতে লেগে আছে রক্ত। যুবক তাড়াতাড়ি করে বলে, আফিয়া, মুক্তিগো দলে নাম লিখাইছি। হালাগো মাইরা সাফ কইরা নিই, তারপর বিয়া করুম, কি কও? আব্বা কই? ঘরে আছে?

দাদি জবাব দেয় না। পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। যুবক বলে উঠে, কি অইছে আফিয়া? ঘরে খাওন থাকে তো দেও, যাওন লাগবো। খুদায় পেডের ভিত্রে নড়েচড়ে।

দাদি ভাত বাড়ে। পেট পুরে খায় যুবক আর তার তিন সঙ্গী। দরজার আড়াল থেকে লুকিয়ে সবকিছু দেখে থাকে দাদির মা।

খাওয়া শেষ হলে উঠে দাঁড়ায় যুবক। হাত ধরে টেনে বাইরে আনে দাদিকে। জীবনের প্রথম কোন পুরুষের স্পর্শে কেঁপে উঠে দাদি। দাদির হাত চেপে ধরে যুবক বলে, আফিয়া, আমাগো বিয়া অইবো আমাগো দেশে। আমাগো শেখসাবরে দাওয়াত দিমু বিয়াতে। আফিয়ারে, তুমি ডরাইয়ো না। আমি ফিরা আইমু। আমাগো বিয়া অইবো আমাগো দেশে।

চলে যায় দাদির যুবক প্রেমিক। পেছন থেকে তাকিয়ে থাকে দাদি। এক পা, দুই পা করে অন্ধকারের বুকে হারিয়ে যায় দাদির কিশোরী বুকে জায়গা করে নেওয়া সেই প্রেমিক। দাদি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবতে থাকে একদিন ফিরে আসবে কিরণ। বিয়ে হবে তাদের। একদিন, দুইদিন, তিনদিনঅনেকদিন দাদি নিজের সেই হাতটি পানিতে ভেজায় না, সেই হাতে কওে না কোন কাজ। খুব যত্ন করে আগলে রাখে দাদির সেই যোদ্ধা প্রেমিকের হাতের স্পর্শ।

যুদ্ধ শেষ হয়। স্বাধীন হয় দেশ। কিন্তু দাদির সেই প্রেমিক আর ফিরে আসে না। মানুষের কাছ থেকে শুনে মিলিটারিদের হাতে ধরা পড়ে কিরণ। মিলিটারিদের হাতে মরার আগেই নাকি নিজের কাঁধের রাইফেল চালিয়ে উড়িয়ে দেয় নিজের খুলি।

অনেক অনেক বছর কেটে যায়। বদলে যায় দেশ। দাদির বিয়ে হয় নতুন একজনের সাথে। আমার সুন্দরী দাদির শরীর ক্রমশ কুঁচকে আসে। তবুও দাদির মনে সেই পাগল প্রেমিক, যে কিনা দাদিকে কথা দিয়ে গিয়েছিলো তাদের বিয়ে হবে স্বাধীন দেশে। দেশ স্বাধীন হয়। সেই স্বাধীন দেশে বিয়ের করার জন্য থাকে না সেই প্রেমিক। এক বুক হাহাকার নিয়ে বেঁচে থাকে দাদি।

দাদি আমাকে মাঝেমধ্যে সেই হাত গালে লাগিয়ে বলে, একজন বীরের স্পর্শ দিচ্ছিরে নাতি। তুই বড় হইয়া বীর হবি। কিন্তু দাদির কথা ঠিক হয় না। আমি বড় হয়ে হতে চাইছি একজন গল্পকার। আমিও মাঝেমধ্যে দাদির সেই হাত স্পর্শ করি। স্পর্শ করলেই যেনো আমি ছুঁতে পারি সেই যোদ্ধাকে যে কিনা নিজের খুলিতে চালিয়ে দিয়েছিলে রাইফেল।

নবম শ্রেণিতে উঠার পর দাদি আমাকে বারণ করে প্রেমে পড়তে। দাদি ঠাট্টা করে। দাদি এমন ঠাট্টা আমাকে যতদিন কাছে পেয়েছে ততদিনই করেছে। এখন আমি দাদির পাশে নেই। ঢাকায় চলে এসেছি পড়াশোনার কারণে আর দাদি থাকেন গ্রামে। দাদি আর সেই বিচক্ষণ নেই। কথা বলতে পারে না। নানানরকম রোগের সাথে পাঞ্জা নড়ছে সেই বীর যুবকের প্রৌঢ় প্রেমিকা।

আম্মা বলেন, দাদি মাঝেমধ্যে হাউমাউ করে কাঁদেন। কোন শব্দ হয় না। আম্মা শুধু দেখেন আমার দাদি ফুঁপাচ্ছেন। এমন নৈঃশব্দ্যিক কান্না আম্মাকে বিচলিত করে, আম্মা বুঝতে পারেন না কেন কাঁদছেন দাদি। কিন্তু বুঝতে পারি আমি। আম্মার কথা শুনেই আমি ধরতে পারি আমার দাদির সেই নৈঃশব্দ্যিক কান্নার ভেতর লুকিয়ে আছে ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম এক ট্রাজিক গল্প। যার শুরু হয়েছিলো কিন্তু শেষ হয়নি।

কি আশ্চর্য! সুমনের স্মরণ শক্তির প্রশংসা কিভাবে করবো বুঝতে পারছি না। আমার দাদির এই গল্প তো লেখা যেতেই পারে। আমি নিজের ভেতর নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, যে আমি দাদির এই গল্পকে একটা সাহিত্যক রূপ দিয়ে গল্প বানিয়ে তুলবো অচিরেই। কিন্তু আমাকে সময় নিতে হবে। এমন একটা অসাধারণ জীবন্ত গল্পকে সাজানোর জন্য দরকার সাহিত্যের বিভিন্ন ফাঁকফোকরগুলোকে ভালোমতো জানা, পড়া। আমাকে যেতে হবে সেইসব চোরাগোপ্তা রাস্তাগুলোতে যেখানে রয়েছে সাহিত্য রচনা অসাধারণ সব কৌশল। আমি ঠিক করেছি আমি অপেক্ষা করবো। যতদিন না পর্যন্ত আমি সেইসব রাস্তায় বিচরণ করতে পারছি।

আমি ফিরে আসি সুমনের কাছে। সুমনকে বলি, সুমন শোন, আমি গ্রামে যাচ্ছি আজ রাতের গাড়িতেই।

সুমন বলে, হঠাৎ করে?

আমি হঠাৎ করে বলতে দাদির কাছে যাবো। দাদির অবস্থা ভালো না।

গুমন বলে তুই গেলেই কি ভালো হয়ে যাবে?

আমি দাদির সেই হাত ছুঁতে চাই। আমার দরকার সেই যোদ্ধার স্পর্শ, যা এতোদিন দাদি যত্নে আগলে রেখেছেন।

সুমন বলে কিসের স্পর্শ?

আমি আর সুমনকে কোন জবাব না দিয়ে হনহন করে হাঁটতে থাকি। আমাকে বাড়ি পৌঁছুতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলী নদী ও এলোমেলো স্মৃতির উপাখ্যান
পরবর্তী নিবন্ধলেদার প্রোডাক্ট প্রোডাকশন শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠান