টানা দশ বছরের স্থবিরতা ভেঙে করোনাকালেই বেশ খানিকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ার বাজার। প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রবাস থেকে বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি। রফতানি আয়ও হয়েছে মন্দের ভালো। শুধু তাই নয়, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ খাতই সচল হয়েছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে কোনও গতি আসেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা এখনও যায়নি, একই কারণে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি ব্যবসা-বাণিজ্য। গতি ফেরেনি আমদানি-রফতানিতেও। ফলে নানা অনিশ্চয়তায় নতুন করে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না উদ্যোক্তারা। এতে করে কমেছে ঋণের চাহিদা। জানা গেছে, অধিকাংশ ব্যাংকই এখন নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছে না। যেটুকু ঋণ দেওয়া হচ্ছে তা খুবই সতর্কতার সঙ্গে। কারণ, এখন ঋণ আদায় হচ্ছে না। এতে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বেসরকারি খাতে এত কম প্রবৃদ্ধি এর আগে কখনও হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মহামারির কারণে অধিকাংশ ব্যাংক দেখেশুনে বিনিয়োগ করছে। অনেকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। যে কারণে ঋণের প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হলে তবেই ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে আসবেন। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীরা ব্যাংকবিমুখ। যে কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে।
আবার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকে রাখার জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে সংকটে টিকে থাকতে বিদ্যমান ব্যবসা সংকুচিত করছেন। এমন অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে তারা নতুন করে বিনিয়োগে আসতে চাচ্ছে না। এ কারণে ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়ার গ্রাহকও পাচ্ছে না। ফলে ঋণ প্রবাহে কমে গেছে গতি।