স্ত্রী-মেয়ের সঙ্গে পাশাপাশি কবরে শায়িত শুল্ক কর্মকর্তা

বেইলি রোডের ট্রাজেডি

টেকনাফ প্রতিনিধি | সোমবার , ৪ মার্চ, ২০২৪ at ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

পাশাপাশি তিনটি কবর। একটিতে শুল্ক কর্মকর্তা শাহজালাল, পাশের দুটিতে স্ত্রী ও চার বছরের মেয়ে। ঢাকার বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে স্ত্রীসন্তানের সঙ্গে আগুনে পুড়ে নিহত শুল্ক কর্মকর্তা শাহজালাল উদ্দিনকে তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ায় দাফন করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ১১টায় কক্সবাজারের মরিচ্যা মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে।

জানাজার পূর্বে তাদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন উখিয়াটেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি, নিহত শাহজালালের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, উখিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পরিবারের সদস্যরা।

জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় শাহজালাল, তাঁর স্ত্রী মেহেরুন নিসা (২৪) ও তাদের একমাত্র আদরের মেয়ে চার বছর বয়সী ফাইরুজ কাশেম জামিরাকে।

এর আগে সকাল থেকে দূরদূরান্ত থেকে তাদের এক নজরে দেখতে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে চলে স্বজনদের আহাজারি। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি সাধারণ মানুষও। সবার বুকে ছিল পাহাড়সম পাথর। ব্যথিত হৃদয়ে শাহজালাল ও তার স্ত্রীসন্তানকে চিরবিদায় দেন সবাই। এ সময় সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আর যেন কোনো বাবামায়ের কোল খালি না হয়। সরকারকে এ নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত।

শুল্ক কর্মকর্তা শাহজালাল উদ্দিন (৩৭) স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাস্টম কোয়ার্টারে। কঙবাজারে বাড়িতে আসার জন্য দুদিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। বাড়ির পথে রওনা হওয়ার আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রীসন্তানকে নিয়ে তিনি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় যান। আগুনে পুড়ে সেখানেই তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এতে জীবিত অবস্থায় আর ফেরা হলো না আপন নিবাস কঙবাজারে।

গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহজালালের স্ত্রী মেহেরুন নিসার রামুর গ্রামের বাড়ি ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে পৌঁছায় তাদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স। তাদের মরদেহ পৌঁছার পর সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম নামাজে জানাজা। এরপর মরদেহ নেওয়া হয় শাহজালালের গ্রামের বাড়ি কঙবাজারের হলদিয়াপালংয়ে। গতকাল সকাল ১১টায় মরিচ্যা মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত করা হয় তাদের।

এদিকে ছেলে শাহজালালসহ আদরের নাতনি ও পূত্রবধূকে হারিয়ে বাবা আবুল কাশেম এখন অনেকটাই বাকরুদ্ধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবস্তি থেকে বহুতল ভবন সব জায়গায় অগ্নিঝুঁকি
পরবর্তী নিবন্ধঅভিযানের খবরে পালালেন ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক