করোনা প্রতিরোধে ৫-১১ বছরের (১২ বছরের কম বয়সী) শিশুদের টিকা প্রয়োগ অবশেষে চট্টগ্রামেও শুরু হচ্ছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হলেও প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীদের এ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে।
আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় শিশুদের এ টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। নগরীর সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে সিটি মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। আর পরের দিন (২৫ আগস্ট) থেকে সিটি কর্পোরেশন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পুরোদমে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. নাসিম ভূইঞা আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫-১১ বছরের শিশুদের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে গতকাল দুপুরে সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, চসিকের স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. নাসিম ভূইঞা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পক্ষে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রিটন বড়ুয়াসহ সংশ্লিষ্টরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অংশ নেয়া চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, শিশুদের এই টিকাদান সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। আমরা (সিভিল সার্জন কার্যালয়) তাদের প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিবো। এটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। সেভাবেই এই কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। একই তথ্য দিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশন এই টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবে। আর আমরা (শিক্ষা বিভাগ) প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছি। যেহেতু শিক্ষার্থীরা কম বয়সী, তাই স্কুলে স্কুলে গিয়ে যাতে টিকাটা প্রয়োগ করা হয়; আমরা সেটি বলেছি।
স্কুলে স্কুলে গিয়েই শিশুদের এ টিকা দেয়া হবে জানিয়ে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. নাসিম ভূইঞা আজাদীকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে চারটি টিম এ টিকা প্রয়োগ করবে। প্রতি টিমে দুজন করে টিকাদান কর্মী থাকবেন। সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে সবমিলিয়ে ১৬৪টি টিম টিকা প্রয়োগে কাজ করবে। শিশুদের প্রথম ডোজ টিকাদানে মন্ত্রণালয় থেকে ১২ দিনের একটি সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একই সাথে টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক, কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রাসাসহ সিটি কর্পোরেশন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সবমিলিয়ে প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থী এ টিকা পাবে। সুষ্ঠুভাবে এ টিকাদান সম্পন্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি শেষের পথে জানিয়ে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমাদের তিনজন ডাক্তার ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। তারা এখন টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আজ-কালের মধ্যেই টিকাদান কর্মীদের এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ হবে। বুধবার মেয়র মহোদয় টিকাদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। আর পরের দিন (২৫ আগস্ট) থেকে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পুরোদমে এ কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান ডা. মো. নাসিম ভূইঞা।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ৫-১১ বছরের শিশুদের ফাইজারের বিশেষ ধরনের টিকা প্রয়োগ করা হবে। টিকা পেতে এই বয়সী শিশুদের জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করতে হবে। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন না হলে টিকা নেয়া যাবে না। তাই যাদের এখনো জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন হয়নি, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। শিক্ষার্থীদের টিকাদানে করণীয় বিষয়ে সমপ্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও বেশ কয়েকদফা নির্দেশনা জারি করে। শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধনে শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২ হাজার ২৬৯টি। এসব প্রতিষ্ঠানে ৫-১২ বছর বয়সী (১ম-৫ম শ্রেণির) শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৯ জন। এছাড়া বেসরকারি স্কুলগুলোতে এই বয়সী আরো ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সবমিলিয়ে জেলার ৫-১২ বছর বয়সী মোট ১০ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৪ জন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ঢাকায় পাঠানো হয়। আর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২১৫টি। যদিও মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্টেনের সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিক, কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রাসাসহ সিটি কর্পোরেশন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫-১১ বছর বয়সী প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।