সোহরাব হোসেন(১৯২২–২০১২)। নজরুল সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী। দীর্ঘ আট দশক ধরে নজরুল সংগীতের সাধনায় নিজেকে নিমগ্ন রেখে সংগীতের এ শাখাকে সমৃদ্ধ করেছেন, খ্যাতি অর্জন করেছেন দেশে ও বিদেশে। সংগীত শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন একনিষ্ঠ ও নিবেদিতপ্রাণ। সোহরাব হোসেনের জন্ম ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ৯ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার আয়েশতলা গ্রামে। সোহরাব হোসেনের মায়ের বংশের দিকে গান বাজনার চল ছিল। গ্রামে তিনি ছোটবেলা থেকে গান বাজনা শুনতেন। শৈশবেই সোহরাব সুরের মায়ায় মোহিত হন। তার যখন বয়স ৯ বছর তখন তিনি নজরুলের গান শোনেন রানাঘাটে। তিনি জয়নুল আবেদীন নামের একজন শিক্ষকের কাছে প্রথম তালিম নেন। পারিবারিক বিরাগ উপেক্ষা করে পরবর্তী সময়ে সংগীতগুরু কিরণ দে চৌধুরী, শিল্পী পূরবী দত্ত প্রমুখের কাছে তালিম নিয়েছেন। কিরণ দে চৌধুরীর মাধ্যমে শিল্পী সোহরাব হোসেন কলকাতার শ্রীরঙ্গম থিয়েটারে গায়ক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এইচএমভি ও রেডিও–র শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। শিল্পী জীবনে সোহরাব শিল্পী আব্বাস উদ্দীন, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, আঙুরবালা, ইন্দুবালা, গিরীশ চক্রবর্তী, ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ, শচীন দেব বর্মন, অঞ্জলি মুখার্জি, কবি জসীম উদ্দীন প্রমুখ বিখ্যাত জনের সাহচর্য লাভ করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে শিল্পী ঢাকায় স্থায়ী হন এবং সরকারি তথ্য বিভাগের কাজে যোগ দেন। পাশাপাশি বেতারে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন এবং সংগীত শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও শিক্ষক ছিলেন তিনি। এছাড়া বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি ও নজরুল একাডেমির শিক্ষক এবং নজরুল সংগীত প্রমাণীকরণ পরিষদ ও নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন সোহরাব হোসেন। বাংলাদেশের অনেক কৃতি শিল্পী তাঁর কাছে সংগীত শিক্ষা নিয়েছেন। বেশ কিছু আধুনিক গানও গেয়েছেন তিনি।
কণ্ঠ দিয়েছেন ‘মাটির পাহাড়’, ‘যে নদী মরুপথে’, ‘গোধূলির প্রেম’, ‘শীত বিকেল’ ও ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছায়াছবিতে। নজরুল সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য সোহরাব হোসেন ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি নজরুল একাডেমি পদক, চ্যানেল আই সম্মাননা প্রভৃতি লাভ করেছেন। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সোহরাব হোসেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সম্মাননা লাভ করেন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর কিংবদন্তি শিল্পী সোহরাব হোসেন মৃত্যুবরণ করেন।