ঈদুল আজহার ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের সমাগম বেড়েছে। ঈদের দিন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পর্যটকে ভরপুর রয়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। আগামী শনিবার পর্যন্ত পর্যটকের সমাগম বজায় থাকবে বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ছয়দিনে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন অন্তত ৬ লাখ পর্যটক। এবং বাকি ২ দিন আজ শুক্র ও শনিবার মিলে মোট আটদিনে প্রায় ৭ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে।
বিপুল সংখ্যক পর্যটক আগমনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার জেলার সব পর্যটন কেন্দ্র লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। এতে পর্যটন ব্যবসাগুলো চাঙা হয়ে উঠেছে। বিপুল সংখ্যক পর্যটক সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে পড়েছেন আইন–শৃঙ্খলাবাহিনীসহ অন্যান্যরা। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা এসব পর্যটকের কাছে উপেক্ষিত হয়েছে রোদ, বৃষ্টি এবং উত্তাল সাগর। কখনো তীব্র রোদে আবার কখনো বৃষ্টিতে ভিজে সাগরের ঢেউয়ের তালে শরীর ভাসিয়েছেন তারা। আর এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। স্রোতের কবলে প্রাণ হারিয়েছে ৪ জন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ঈদুল আজহার ষষ্ঠ দিনও উত্তাল সাগরের নোনাজলে মাতোয়ারা লাখো পর্যটক। ঠানা ছুটিতে বাঁধভাঙা আনন্দ–উচ্ছ্বাসে মুহূর্তগুলো উপভোগ করছেন তারা। সকাল হতেই সমুদ্র সৈকতের সব পয়েন্টে বাড়তে থাকে পর্যটকের আগমন। দিনের বেলা ১২টায় দেখা যায়, কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সাগরতীরে জুড়ে লাখের বেশি পর্যটকের অবস্থান। তারা নোনাজলে ডুব সাঁতারের পাশাপাশি বালুচরে ছবি তোলা ও বালু নিয়ে খেলায় মেতেছেন। শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়, আগত পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ঝরনা, ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, রামুর বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, শহরের বার্মিজ মার্কেট, রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড এবং ডুলাহাজার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক হামিদুর রহমান (৬০) বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছরের ঈদটা অন্যভাবে উপভোগ করছি। নাতি–নাতনিসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে কঙবাজারে এসে দারুণ উপভোগ করেছি। এই ভ্রমণ সারাজীবন মধুর হয়ে স্মৃতি হয়ে থাকবে। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক তানহা আলম বলেন, কর্মক্ষেত্রে এত লম্বা ছুটি পাওয়া হয় না। তাই ইচ্ছে থাকলেও কঙবাজারে ছুটে আসা যায় না। কিন্তু এবার ঈদের ছুটিটা অনেক বেশি, বলা যায় ১০ দিন। তাই পরিবার–পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ছুটে আসা। সৈকতে যতই মানুষ বাড়ে, ততই আনন্দ লাগে।
কঙবাজার হোটেল–মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানান, ঈদের প্রথম দিন পর্যটকের উপস্থিতি তেমনটা ছিল না। দ্বিতীয় দিন থেকে পর্যটক এমনভাবে সমাগম বাড়তে শুরু করেছে–যা কল্পনাতীত। এতে সাড়ে ৫ শতাধিক হোটেল–মোটেল ও রিসোর্টের প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে যায়। অনেক পর্যটক কক্ষ না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। তার দেওয়া তথ্য মতে, গত ছয়দিনে প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি পর্যটক কঙবাজারে ভ্রমণে এসেছেন। আগামী দুইদিন আরও লক্ষাধিক পর্যটক ভ্রমণের আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কঙবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি বলেন, ঈদের ছুটিতে একাধিক মোবাইল টিম পর্যটকদের সকল ধরনের হয়রানি রোধে মাঠে কাজ করছে। কোনোভাবে যাতে পর্যটক হয়রানি না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সারাক্ষণ কাজ করেছি। আগামী শনিবারও একইভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখা হবে।