সৈকতে মরা মাছ ও প্রাণী ভেসে আসার কারণ কী

এবার উখিয়ায় ভেসে এল ডলফিন

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ২১ মার্চ, ২০২২ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার শহরের কলাতলী সৈকতের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শনিবার বিকালে ও রাতের সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে ভেসে আসে হাজার হাজার মরা মাছ। গতকাল রোববার সকালে উখিয়ার পাটুয়ারটেক সৈকতে ভেসে আসে একটি মরা ডলফিন। কিন্তু কক্সবাজার সৈকতে হঠাৎ করে এত মরা প্রাণী ভেসে আসার কারণ কী?
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান
বিপ্লব বলেন, শনিবার বিকালে ও রাতে কলাতলী সৈকতে কিছু মরা মাছ ভেসে আসার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করেছি। এ বিষয়ে স্থানীয় জেলেদের সাথেও কথা বলেছি। তারা বলেছে, জাহাজ থেকে এই মাছগুলো ফেলে দেয়া হয়েছে। মরা মাছগুলোর প্রায় সবগুলোই চামিলা প্রজাতির মাছ, যা স্থানীয়দের কাছে ‘গরু’ মাছ নামে পরিচিত।
তিনি জানান, এ মাছ উপকূলেই থাকে। তাই গভীর সাগরে ট্রলার থেকে সেটা নিক্ষেপ করা সম্ভব নয়। হয়তো উপকূলীয় এলাকায় টানা জালের কোনো বোট বেশি মাছ পাওয়ায় কম দামী মাছগুলো সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে। আর সেগুলো জোয়ারের সময় সৈকতে ভেসে এসেছে।
শনিবার বিকালে ও রাতের সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে কক্সবাজার শহরের কলাতলী সৈকতের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভেসে আসে হাজার হাজার মরা মাছ। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে কানাঘুষা শুরু হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীরাও এর কারণ অনুসন্ধানে নামেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানতে পেরেছি, মহেশখালী এলাকার টানাজালের একটি বোটে ব্যাপক পরিমাণ ‘গরু’ মাছ ধরা পড়ার পর বোটে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সেই বোটের মাঝিমাল্লারা কিছু মাছ বিনামূল্যে অপর দুটি বোটের জেলেদের দিয়ে দেয়। কিন্তু ছোট মাছগুলো কেউ নিতে রাজি না হওয়ায় সেগুলো সাগরে ফেলে দিয়েই চলে যায় ওই বোটের মাঝিমাল্লারা। এই ধরনের ঘটনা সাগরে মাঝেমধ্যে ঘটে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, কক্সবাজার সৈকতে হঠাৎ করে হাজার হাজার মরা মাছ ভেসে আসার খবর পেয়ে আমাদের বিজ্ঞানীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তারা কলাতলী থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত সমুদ্র উপকূল থেকে পানির নমুনাও সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু পানির গুণাগুণে কোনো অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়নি।
তিনি বলেন, ভেসে আসা মাছের মধ্যে ২/৩ প্রজাতির ছোট ছোট মাছ দেখা গেলেও বেশিরভাগই ছিল চামিলা জাতের ‘গরু’ মাছ। এরা দলবদ্ধভাবে চলাচল করে এবং এভাবেই বড় হয় বলে এদেরকে ‘স্কুল অব ফিশ’ বলা হয়। হয়তো ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণের সময় একটি ‘স্কুল’ বা বড় দল আটকা পড়ে জেলেদের জালে। ফলে বোটের অতিরিক্ত মাছগুলো তারা সাগরেই ফেলে দেয়। আর এই ধরনের ঘটনা সাগরে হরহামেশা ঘটে, যা আমাদের নজরে আসে না। তিনি জানান, জেলেরা সাগরে বেশি মাছ পেলে দামী মাছগুলো রেখে বাকিগুলো ফেলে দেয়।
উখিয়ার পাটুয়ারটেক সৈকতে ভেসে আসা মরা ডলফিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্দামান সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। সাগরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য অস্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি হয়। এ সময় অনেক প্রাণী মৃত্যুর মুখে পড়ে। আবার সাগরে চলাচলকারী জাহাজের ধাক্কায়ও অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণী আঘাত পেয়ে মৃত্যুবরণ করে। রোববার পাটুয়ারটেক সৈকতে ভেসে আসা মরা ডলফিনটির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে আমাদের বিজ্ঞানীরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তারা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও দুটি মরা ডলফিন ভেসে আসে টেকনাফ সৈকতে। গত বছর এপ্রিলের ৯ ও ১০ তারিখ পরপর দুটি মরা তিমি ভেসে আসে হিমছড়ি সৈকতে। তবে তিমি দুটির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ফরেনসিক রিপোর্ট সংগ্রহ করেনি সরকারি কোনো দপ্তর। সর্বশেষ জরিপ মতে, আমাদের দেশে ১২ প্রজাতির জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। যার মধ্যে ৪ প্রজাতির তিমি, ৭ প্রজাতির শুশুক (ডলফিন) ও এক প্রজাতির হুছুম (পরপইস) রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিকলবাহা খালে একদিনের ব্যবধানে আরেক লাশ
পরবর্তী নিবন্ধরইল বাকি ১৩৫টি!