এবার কক্সবাজার সৈকতে একদিনে ভেসে এলো আরো দুটি মৃত ডলফিন। গতকাল শুক্রবার সকালে কক্সবাজার শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনারপাড়া সৈকতে ও ২৬ কিমি দক্ষিণে পাটুয়ারটেক সৈকতে মৃত ডলফিন দুটো ভেসে আসে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে হিমছড়ি সৈকতে একটি ডলফিন ও তার আগেরদিন শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি পরপইস এর মৃতদেহ ভেসে এসেছিল। এ নিয়ে গত তিন দিনে তিনটি ডলফিনসহ চারটি স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাঁচটি সামুদ্রিক কাছিমের মরদেহ ভেসে এসেছে কক্সবাজার সৈকতে।
২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে স্তন্যপায়ী ডলফিন, পরপইস ও সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। এগুলো শিকার করা, খাওয়া, অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ পরিবহন ও ক্রয়–বিক্রয় করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে উখিয়ার সোনারপাড়া ও পাটুয়ারটেক সৈকতে সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে দুটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। খবর পেয়ে ডলফিন দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে সোনারপাড়া সৈকতে ভেসে আসা ডলফিনটি ইরাবতি ডলফিন এবং পাটুয়ারটেক সৈকতে ভেসে আসা ডলফিনটি ইন্দোপ্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাক বা গোলাপী ডলফিন প্রজাতির। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোলাপী প্রজাতির ডলফিন প্রথম ভেসে এসেছে।
তিনি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় রেজু নদীর মোহনায় আরো তিনটি রিডলি জাতের মা কচ্ছপের মরদেহ ভেসে এসেছে। ময়না তদন্তে প্রত্যেকটি কাছিমের পেটে ডিম পাওয়া গেছে। কাছিমগুলো সৈকতে ডিম পাড়তে আসার পথেই মারা যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে গত তিন দিনে তিনটি ডলফিন, একটি পরপইসসহ চারটি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাঁচটি সামুদ্রিক কাছিমের মরদেহ ভেসে এসেছে।
হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির ডলফিনটির কঙ্কাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তরিকুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যতে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য বোরিতে হ্যাম্পব্যাকের কঙ্কাল সংরক্ষণ করা হবে। উদ্ধার করা ইন্দোপ্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাকের ওজন ২৪০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। আর সোনারপাড়া সৈকতে আসা ইরাবতী ডলফিনটির দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি। এটির ওজন ৭০ কেজি। দুটির নমুনা সংগ্রহের পর সৈকতের বালিয়াড়িতে মাটিচাপা দেওয়া হবে। এরপর এক থেকে দেড় বছর পর দুটির কঙ্কাল উত্তোলন করে বোরিতে সংরক্ষণ করা হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের রেজুখালের মোহনায় দুটি মা কচ্ছপ ও বিকেলে হিমছড়ি সৈকতে একটি ইরাবতী প্রজাতির ডলফিনের মৃতদেহ ভেসে এসেছিল। এর আগেরদিন বুধবার সকালে কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি বিপন্ন স্তন্যপায়ী পরপইসের মৃতদেহ ভেসে আসে।
চলতি মৌসুমে কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া সৈকতে অন্তত ২৪টি মরা সামুদ্রিক কচ্ছপ ভেসে আসে বলে জানান সমুদ্রবিজ্ঞানীরা। কিন্তু কী কারণে হঠাৎ করে কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে ডলফিন, পরপরইসসহ এত সংরক্ষিত প্রাণী মারা যাচ্ছে তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ফরেনসিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। প্রাণীগুলোর আবাসস্থলে কোনো বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে কি না, তাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।