কক্সবাজার সৈকতে বিভিন্ন সময়ে ভেসে আসা মরা ডলফিন ও তিমি নিয়ে প্রদর্শনী কেন্দ্র হচ্ছে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর এবং বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) যৌথভাবে এই কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে। কেন্দ্রটি শিক্ষার্থী, গবেষক ও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে জানান সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এই প্রদর্শনী কেন্দ্রে গত ২৩ আগস্ট ইনানীর বাইলাখালী সৈকতে ভেসে আসা সেই ডলফিনটি সংগ্রহ করা হয়েছে। ডলফিনটি স্পিনার ডলফিন, বৈজ্ঞানিক নাম স্টিনেলা লুঙ্গিরোস্ট্রিচ বলে শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া গত বছর ৯ ও ১০ এপ্রিল হিমছড়ি সৈকত থেকে উদ্ধার বলিনোপেট্রা ইডেনি প্রজাতির সেই মৃত তিমি দুটির কংকালও সংগ্রহ করা হবে। আসছে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সমুদ্রের পানির উচ্চতা কমে গেলে সৈকত থেকে খুঁড়ে তিমি দুটির কংকাল বের করা হবে। এরপর সেই কংকালকে কৃত্রিমভাবে তিমির আকার দেয়া হবে। গত ২৩ আগস্ট ইনানীর বাইলাখালী সৈকতে ২৭ কেজি ওজনের ও ৫ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি মুমূর্ষু ডলফিন ভেসে আসে এবং পরে মারা যায়। ডলফিনটি ইতোমধ্যে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট সংগ্রহ করলেও এর আগে কোনো ডলফিন বা তিমি সংগ্রহ করেনি। এর আগে গত ২০ মার্চ ইনানী সৈকতে ভেসে এসেছিল একটি মরা ডলফিন। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। এগুলো সৈকতেই পুঁতে ফেলেছে বনবিভাগ। একইভাবে গত বছর ৯ ও ১০ এপ্রিল হিমছড়ি সৈকত থেকে উদ্ধার সেই মৃত তিমি দুটিও সৈকতে পুঁতে ফেলা হয়। তবে এই তিমি দুটির কংকাল সংগ্রহের মাধ্যমে কঙবাজারে একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। এ জন্য কঙবাজার সাগরপাড়ে ভাড়ায় একটি সরকারি পরিত্যক্ত ভবন চেয়ে গত বছর ১৮ আগস্ট কঙবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবরে চিঠি দিয়েছিলেন বিজ্ঞান জাদুঘরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মুনীর চৌধুরী।
উক্ত পত্রে বলা হয়, হিমছড়ি সৈকত থেকে উদ্ধার সেই মৃত তিমি দুটির কংকালকে রূপ দিয়ে একটি অস্থায়ী প্রদর্শনীর মাধ্যমে পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে সামুদ্রিক সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণসহ ব্লু-ইকনোমির তথ্যাদি বৈজ্ঞানিকভাবে উপস্থাপন করতে চায় জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানটি।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মুনীর চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিজ্ঞান মনষ্কতা সৃজনে প্রতিষ্ঠানটি বহুমাত্রিক ভূমিকা পালন করে আসছে। যেখানে বিজ্ঞানের সকল শাখার বিষয়বস্তু নিয়ে ৭টি গ্যালারি রয়েছে। এছাড়া দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর জন্য ৫টি মিওজু বাস, ৪টি মুভি বাস, ২টি মোবাইল অবজারভেটরি বাস রয়েছে। তবে রাজধানীর বাইরে কোনো কেন্দ্র নেই। অথচ দেশের একটি পর্যটন কেন্দ্র ও সমুদ্র শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসাবে কঙবাজারে বিজ্ঞান যাদুঘরের একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র থাকা উচিত। আর এই কেন্দ্রের জন্য কঙবাজার শহরে সরকারি পরিত্যক্ত কোনো ভবন বরাদ্দ না পাওয়ায় গত মাসে পেঁচারদ্বীপস্থ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটে কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য মানুষের মাঝে সমুদ্র সাক্ষরতা বা সমুদ্র, সামুদ্রিক পরিবেশ ও প্রাণি নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা অপরিহার্য। তারই লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান দুটি কঙবাজারে সামুদ্রিক প্রাণিদের নিয়ে একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র করতে চায়। এছাড়া এই ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে একটি একুরিয়াম তৈরির জন্য রেজু নদীর পাড়ে ২৫ একর জমি চাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।