পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নামার আগেই সারি সারি সবুজের সমারোহ। দূর থেকে মনে হয় সেই ঝাউগাছগুলো যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সবুজ বেষ্টনি হিসাবে পরিচিত সেই ঝাউবাগান এখন সাগরের আগ্রাসনের কবলে পড়েছে। সৈকতের ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার ঝাউগাছ। ভাঙন অব্যাহত থাকায় একদিকে সমুদ্র সৈকত সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে। অন্যদিকে হুমকীর মুখে পড়েছে সৈকতের জীববৈচিত্র্য। জিও ব্যাগ দিয়েও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সাগর তীরের অপরূপ ও নয়নাভিরাম দৃশ্যের এ সৈকতে গত চার দশকে ভাঙনে সাড়ে ৫ লাখেরও বেশি ঝাউ গাছ বিলীন হয়ে গেছে।
পরিবেশবাদীরা জানান, ঝাউবাগানের ভেতরে এক ধরনের বেসিনের মত গর্ত তৈরি হয়, যেখানে পানি জমে থাকে। জমে থাকা এসব পানি ভাঙনকে ত্বরান্বিত করে। তাই ভাঙন রোধে ঝাউবনের পাশাপাশি নারকেলসহ অধিক শেকড়যুক্ত গাছ যেগুলো উপকূলীয় এলাকায় হয়, এ ধরনের গাছ লাগাতে হবে। গতকাল বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার সৈকতের রক্ষাকবচ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ঝাউগাছ। কিন্তু সাগরের করাল গ্রাসে শহরের নাজিরারটেক, চরপাড়া, সমিতি পাড়া, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, শৈবাল পয়েন্ট থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত ঝাউবাগানে নেমে এসেছে মহাবিপর্যয়। গত দুই বছরে শুধুমাত্র এসব এলাকায় বিলীন হয়েছে অন্তত ৬ হাজার গাছ। এছাড়াও পর্যটন স্পট হিমছড়ি, প্যাঁচারদ্বীপ, ইনানীসহ টেকনাফ পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে ভাঙন, নিধন এবং দখলের কবলে পড়েছে ঝাউবাগান।
সমিতি পাড়ার বাসিন্দা পরিবেশ সাংবাদিক হুমায়ুন সিকদার আক্ষেপ করে বলেন, ৮০ দশক থেকে সৈকতের বিভিন্ন অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে প্রতিবছর বর্ষায় ভাঙন আরও বেড়ে যায়। তিনি জানান, নাজিরারটেক থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত অব্যাহত ভাঙনে গত দুই বছরে স্থানভেদে এক কিলোমিটারেরও বেশি বালিয়াড়ি বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত ঝাউগাছ নিধনে অনেক ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে সমুদ্র সৈকত এলাকা। এভাবে হলে ভাঙন বেড়ে লোকালয়ে চলে আসবে।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক এইচ এম নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, ঝাউবাগান দখল করে সেখানে অবৈধ বসতি গড়ে তোলায় দিন দিন সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্র সৈকত। শুধু দখল নয়, অবৈধ দখলদারদের শিকারে পরিণত হয়ে প্রতিদিন নিধন করা হচ্ছে শত শত ঝাউগাছ।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের পর থেকে কক্সবাজার সৈকতজুড়ে প্রায় সাত লাখ চারা রোপণ করা হয়। কিন্তু ভাঙন এবং অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা গাছ নিধনের কারণে বর্তমানে গাছের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজারে। এতে উদ্বিগ্ন বন বিভাগও।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সরওয়ার হাসান জানান, যেসব এলাকাগুলোতে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে অবস্থানগত কারণে সেখানে হয়তো আর চারা লাগানো যাবে না। তবে বরাদ্দ আসলেই আরও নতুন নতুন জায়গায় বনায়ন করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, জিও ব্যাগ দিয়ে সৈকতের ভাঙন ও ঝাউগাছ বিলীন রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় জিও ব্যাগ উপড়ে কূলে আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। এতে অনেক ঝাউগাছ ভেঙে যাচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে।