টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের হার দিয়ে। তাও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে। তবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচাইতে বড় আপসেটের একটি হচ্ছে জিম্বাবুয়ের কাছে পাকিস্তানের হার। যে হারে বাবর আজমদের সেমিফাইনালে যাওয়ার পথটা বলতে গেলে একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও এখনো কঠিন সমীকরণে বেঁচে আছে পাকিস্তানের সেমিফাইনালে যাওয়া।
আর সেটি হচ্ছে শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারতে হবে জিম্বাবুয়ের কাছে। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে হবে পাকিস্তানকে। অথবা বাংলাদেশেকে পাকিস্তান হারালে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়ের ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হতে হবে। তখন অবশ্য রান রেটের বিষয়টিও চলে আসবে। কাজেই বলা যায় সেমিফাইনালের পথ অনেকটাই রুদ্ধ পাকিস্তানের জন্য। তারপরও ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। যেকোন কিছুই ঘটতে পারে এখানে। তবে গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ডাকওয়ার্থ/লুইস পদ্ধতিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৩ রানে হারায় পাকিস্তান। এই জয়ের ফলে দুই নাম্বার গ্রুপে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এলো পাকিস্তান। ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ভারত সবার উপরে। ৫ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় স্থানে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই দলের চারবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে সবগুলোই জিতল ২০০৯ সালের শিরোপাজয়ী পাকিস্তান।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের শুরুটা ছিল একেবারে হতাশার। প্রথম ওভারেই একটি চার মেরে ফিরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। অবশ্য এরপর বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নেমে ৩ ছক্কা ও ২ চারের সাহায্যে ১১ বলে ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ হারিস। কিন্তু সেখানেই শেষ তার ঝড়। নরজির বলে ফিরেন হারিস। আরও একবার ব্যর্থ হলেন বাবর আজম। ফিরেছেন ৬ রান করে। আসরে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচের একটিতেও দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারলেন না পাকিস্তান অধিনায়ক। দ্রুত বিদায় নেন শান মাসুদও। ৪৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ধুকছে পাকিস্তান। তখন হাল ধরেন ইফতেখার এবং নেওয়াজ। যদিও ২ রানেই ফিরতে পারতেন ইফতিখার। কিন্তু কঠিন ক্যাচটি নিতে পারেননি কুইন্টন ডি কক। এরপর আর থামেননি ইফতেখার। দুজনের ৫২ রানের জুটি ভাঙে নাওয়াজের বিদায়ে। ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ২৮ রান করে ফিরেন নাওয়াজ। এরপর ইফতিখার ও শাদাবের ব্যাটে এগুতে থাকে পাকিস্তান। দ্রুত ঘুরতে থাকে রানের চাকা। ৩৬ বল ৮২ রানের জুটি গড়েন দুজন। আর তাতেই পাকিস্তান পায় বড় সংগ্রহ। ২০ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শাদাব। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের হয়ে যা দ্বিতীয় দ্রুততম। ২২ বলে ৫২ রান করে ফিরেন শাদাব। এরপর টানা তিন বলে তিন উইকেট নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শাদাব ও মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ফেরান নরজি। ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা ইফতিখারকে ফেরান রাবাদা। ৩৫ বলে ৫১ রান করে আসেন ইফতেখার। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৮৫ রান করে পাকিস্তান।
১৮৬ রানের লক্ষ্য দক্ষিণ আফ্রিকার। সে রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ডি কককে ফেরান শাহীন আফ্রিদি। রানের খাতা খুলতে পারেননি ডি কক। রাইলি রুশোকেও এগুতে দেননি শাহীন। নিজের দ্বিতীয় ওভারে রুশোকে ফেরান শাহীন। দুই ওভারে দুই রান দিয়ে দুই উইকেট নেন শাহীন। মার্করামকে নিয়ে ৪৯ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক বাভুমা। কিন্তু নিজের প্রথম ওভারে বল করতে এসে দুজনকেই ফেরান শাদাব খান। বাভুমা ১৯ বলে ৩৬ আর মার্করাম ১৪ বলে ২০ রান করে ফিরেন। ৯ ওভারে শেষে যখন বৃষ্টি নামে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৪ উইকেটে ৬৯। সে অবস্থায় ডি/এল মেথডে ১৭ রান পিছিয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃষ্টি শেষে যখন খেলা আবার শুরু হয়ে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪ ওভারে ১৪২ রান। অর্থাৎ বৃষ্টির পর ৫ ওভারে ৭৩ রানের দরকার ছিল প্রোটিয়াসদের। ক্লাসেন এবং স্টাবস কিছুটা চেষ্টা করলেও পাকিস্তানের বোলিং এর সামনে সে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে। ৯ উইকেটে ১০৮ রানে থামে প্রোটিয়াসদের ইনিংস। আর তাতেই ৩৩ রানের হার নিশ্চিত হয়ে যায়। দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন আফ্রিদি। শাদাব ১৬ রানে নেন ২ উইকেট। সে সুবাধে ম্যাচ সেরাও শাদাব খান।