চট্টগ্রাম বন্দরে সেবা গ্রহীতার দুর্ভোগ লাঘবে প্রতিটি বার্থে দুইজন করে বার্থ অপারেটর এবং প্রতিটি শেডে চারজন করে শেড অপারেটর নিয়োগ দিলে সেবা গ্রহীতারা প্রতিযোগিতামূলক দরে উন্নত সেবা পাবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর এক চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমানে অনেকগুলি জেটির কার্যক্রমে একজন মাত্র বার্থ অপারেটর থাকায় একদিন পূর্বে কন্টেনার ইন্ডডেন্ট দিয়েও বার্থ অপারেটর পরদিন কন্টেনার খুঁজে পায় না। যার জন্য আমদানিকারককে অতিরিক্ত পোর্ট ও শিপিং কোম্পানির চার্জসহ বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। আরও দু:খজনক যে কন্টেনার পাওয়া যায়নি, তা লিখলে পরের দিনের জন্য ইন্ডডেন্ট দেয়া যায় না। তার স্থলে আমদানিকারককে লিখতে বাধ্য করা হয়, পরিবহন সমস্যার কারণে কন্টেনার ডেলিভারি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে একজন বার্থ অপারেটর অনেকগুলি জেটি হ্যান্ডেল করে বিধায় ‘বকশিস’ ছাড়া কন্টেনার নামানো বিলম্বিত হয়। এ অবস্থায় বার্থ অপারেটর বিষয়ে আমরা প্রস্তাব করছি যে, প্রতিটি জেটির জন্য পৃথক টেন্ডার করে প্রতিটি জেটির জন্য একজন বার্থ অপারেটর নিয়োগ আবশ্যক। যেহেতু, গ্যান্ট্রি ক্রেন, স্যাডেল ক্যারিয়ার, রাবার টায়ার গ্রেন্ট্রি, ফ্রগলিফট ইত্যাদি সকল যন্ত্রপাতি বন্দরের নিজস্ব ইক্যুইপমেন্ট, তাই শুধুমাত্র অতি সহজে সামান্য কন্টেনার উঠা নামানোর কাজে কোনো আকাশচুম্বী দানবিক প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা খুঁজে বার্থ ও শেড অপারেটরের জন্য টেন্ডারের কঠিন শর্ত না দিয়ে, সহজ শর্তে বন্দরের যে কোনো নিবন্ধনকৃত শিপিং এজেন্ট/ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো (আইসিডি)/ অফডক পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কাজে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে বার্থ অপারেটর হিসাবে দরপত্রে অংশগ্রহণ করার জন্য ৯৯ পাতার টেন্ডার ডকুমেন্ট না করে ২ পাতার একটি টেন্ডার পত্র করা প্রয়োজন। যাতে অধিক সংখ্যক বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে উক্ত টেন্ডারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে। ফলে উক্ত কাজে মনোপুলি কার্যক্রম থেকে বন্দর বেরিয়ে আসতে পারবে এবং ব্যয় সাশ্রয় হবে। এছাড়া প্রতিটি জেটিতে ২ জন করে বার্থ অপারেটর নিয়োগ দিয়ে ব্যবসায়ীদের কন্টেনার হ্যান্ডেলিং সুযোগ সৃষ্টি হলে আমদানি খরচ কমবে অন্যদিকে বন্দরও জটমুক্ত হবে। উল্লেখ্য, বার্থ অপারেটরকে শেডের পণ্যের দায়িত্ব দেয়া এবং টেন্ডারবিহীন শেডে পণ্য হ্যান্ডেলিং এর টাকা নেয়ার নির্দেশনা টেন্ডার ফর্ম থেকে বাদ দিতে হবে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শেডে পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য পৃথক শেড অপারেটর নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। বর্তমানে পৃথক শেড অপারেটর না থাকার কারণে বার্থ অপারেটর শেডে পণ্য হ্যান্ডেলিং করছে। পৃথক এলসিএল চালানে পণ্য মার্কা হিসাবে পৃথক স্থানে রাখার কথা থাকলেও তা রাখা হয় না। সিএন্ডএফ এজেন্টকে খুঁজে মাল বের করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে মাল না পাওয়া গেলে বড় কার্টন ভেঙ্গে ছোট করে ডেলিভারি দেয়া হয়। যেহেতু কোনো শেড অপারেটর নাই তাই মালের জন্য কারও তেমন জবাবদিহিতা থাকে না।
অন্যদিকে শেড অপারেটরদের জন্য শেডে পণ্য হ্যান্ডেলিং ও ডেলিভারির জন্য পৃথক টেন্ডার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নূন্যতম ২টি চেম্বার, বিজিএমইএ এবং চট্টগ্রাম বন্দর সমন্বয়ে গঠিত কমিটি কর্তৃক শেড অপারেটর কর্তৃক পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ের নূন্যতম একটি দর হার নির্ধারণ করা প্রয়োজন। প্রতি শেডে অন্তত ৪ জন শেড অপারেটর নিয়োগের টেন্ডার করা প্রয়োজন। বন্দর চার্জ, বার্থ অপারেটর চার্জ এবং শেড অপারেটর চার্জসমূহ প্রদানের জন্য প্রত্যেক সেবাদানকারীকে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্ভিস সেন্টারে চার্জ গ্রহণের বুথ থাকতে হবে। এজেন্টগণ ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে বন্দরের সমস্ত কাজ সম্পন্ন করবে। উল্লেখ্য এ লক্ষ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়ান স্টপ সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেবা প্রদানকারীরা ওয়ান স্টপ সেন্টারের মাধ্যমে সেবা প্রদান করছে না। তাই সকল সেবা প্রদানকারীর ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের একটি বুথ থাকার নির্দেশনাসহ প্রতি বার্থে দুইজন অপারেটর এবং প্রতি শেডে ৪ জন অপারেটর নিয়োগের জন্য টেন্ডারের ব্যবস্থা করে বন্দর কার্যক্রম সংস্কারের অনুরোধ করছি। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি খরচ কমবে, দ্রব্যমূল্য কমবে তথা জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সহায়ক হবে।