টানা ১৩ মাস পর পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধির ধারায় ছেদ পড়েছে। গেল সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে গেছে। গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সবশেষ রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। খবর বিডিনিউজের।
একক মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হলেও অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এখনও ইতিবাচক ধারাতেই মোট রপ্তানি আয়। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে মোট ১২৪২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১১০২ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পণ্য।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো সেবা ছাড়া শুধু পণ্য রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় আসে। মোট রপ্তানি হয় ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।
ইপিবির সেপ্টেম্বরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের আয় কমে যাওয়ার কারণেই একক মাসে মোট রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে গেছে। একই সঙ্গে সেপ্টেম্বরের মোট আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৭ দশমিক ০২ শতাংশ কম। গত সেপ্টেম্বরে ৪২০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির ধাক্কার কারণে ক্রয়াদেশ কমতে থাকায় বেশ কিছুদিন থেকেই রপ্তানিকারকরা বিশেষ করে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা সামনের দিনগুলোতে রপ্তানিতে ধীরগতির ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। গত সেপ্টেম্বরের রপ্তানি আয়ে এর প্রভাব দেখা গেল।
মহামারীর ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর সবশেষ ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের রপ্তানিতে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এরপর থেকে প্রবৃদ্ধিতে একের পর এক রেকর্ড হয়েছে। টানা কয়েক মাস একক মাসে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটির বেশি ছিল। এর মধ্যে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬০ শতাংশ।
সেপ্টেম্বরে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, মহামারী থেকে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোর ১৩ মাসের মাথায় চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে।
দেশের মোট রপ্তানিতে মূলত তৈরি পোশাকের আয় কমে যাওয়ার প্রভাবই বেশি দেখা গেছে। সেপ্টেম্বরে নিট পোশাকে রপ্তানি ৯ শতাংশ কমেছে এবং ওভেনে রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।
বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিজিএমইএ সেপ্টেম্বর থেকে যে প্রবৃদ্ধিতে মন্দা হবে সে বিষয়ে ইতোমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এবং সেপ্টেম্বরের রপ্তানি পরিসংখ্যানে তা স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়েছে। কোভিড পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী খুচরা বাজার বিভিন্ন সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কন্টেনারের অপ্রতুলতা এবং সাপ্লাই চেইন সংকট, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং পরবর্তীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে পূর্বাভাষ অনুযায়ী মন্দার আবির্ভাব, যার কারণে খুচরা বিক্রিতে ধস নেমেছে। ক্রেতাদের পোশাকের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে।