ঘূর্ণিঝড় মোখা সম্বন্ধে সতর্ক করে সেন্টমার্টিনের অলিগলিতে চলছে জোর মাইকিং। ৮নং মহা বিপদ সঙ্কেত ঘোষণার পর দ্বীপের মানুষ কিছুটা আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ দ্বীপ থেকে নিরাপদ অবস্থানের জন্য টেকনাফ শহরে নিজস্ব ঘরবাড়ি, আত্মীয়–স্বজনের বাসায় উঠেছে। তবে তা নগণ্য বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান। তিনি জানান, দ্বীপের সাইক্লোন শেল্টারসহ স্কুল–হোটেলসহ মোট ৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে অন্তত সাত হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে শুধুমাত্র সেন্টমার্টিনের জন্য পাঁচ মেট্রিক টন চাল ও নগদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীও। সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া সকল ফিশিং ট্রলার ও স্পিড বোটগুলো নিরাপদ স্থানে নোঙ্গর করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা নুরুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা সম্বন্ধে অবগত হয়েছি। দ্বীপের আকাশ অন্যান্য দিনের চেয়ে হালকা মেঘাচ্ছন্ন ও গুমোট হয়ে আছে। তবে সকাল দশটা থেকে ধীরে ধীরে বাতাস বইতে শুরু করেছে। তীব্র দাবদাহের পাশাপাশি সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে। দ্বীপে কাজ করতে আসা এবং অবস্থান করা বাইরের শ্রমিকরা ইতিমধ্যে দ্বীপ ছেড়ে গিয়েছে। অতীতের মতো দ্বীপবাসীর মনোবল ঠিক আছে। দ্বীপবাসীর প্রতি আল্লাহর রহমত রয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিষদের সদস্যদের নিয়ে জরুরি সভা এবং নিজ নিজ এালাকায় অবস্থান করে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপে হোটেল–মোটেলসহ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে দ্বীপের বাসিন্দাদের সচেতনতার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য আগে থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি দ্বীপে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবী সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দ্বীপের বাসিন্দাদের আতংকগ্রস্ত না হতে বলা হচ্ছে।
এদিকে মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি দেখভাল করার জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসন মো. শাহীন ইমরান ও জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম শুক্রবার টেকনাফ সফর করে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সেন্টমার্টিনের ৩৭টি ছাড়া টেকনাফের পৌরসভা, সদর, সাবরাং, বাহারছড়া, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নে আরো ৬৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাছাড়া শুকনা খাবার, নিরাপদ পানি, মেডিকেল টিম, নিরাপত্তা টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে প্রশাসন, এনজিও, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমন্বয়ে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়তি সতর্কতা : ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এর ক্ষতি থেকে বাঁচতে কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাইকিং করে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সার্বিক সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভূমিধ্বস ও বন্যায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং অনেককে প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্কুল ও মসজিদ–মাদ্রাসাসহ মজবুত সেন্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ে প্রস্তুতিমূলক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
টেকনাফের মোছনী ন্যাচারপার্কের ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে মাইকিং করে ক্যাম্পের সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। বিভিন্ন ডকুমেন্টসপত্র পলিথিনে ভরে নিরাপদে রাখার জন্য বলা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
উনচিপ্রাং ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি সাব্বির জানান, তাদের ঝুঁকিপূর্ণ ঝুপড়ি ঘরগুলো শক্তভাবে বেঁধে প্রস্তুত করার জন্য প্রশাসন ও এনজিওর পক্ষ থেকে রশিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে। মাইকিং করে সবাই সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রশাসন তাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছে বলে জানান সাব্বির।
টেকনাফস্থ ১৬–আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপ–অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মুহাম্মদ জামাল পাশা বলেন, ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য আমাদের লোকজনকে প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো সমস্যা দেখা গেলে তাদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় আমরা প্রস্তুত আছি।