সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত আজ থেকে সাড়া নেই পর্যটকদের

জাহাজ চলাচল স্থগিত ঘোষণা

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার | শনিবার , ১ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ ৯ মাস পর আজ থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলো অপার সৌন্দর্য্যের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনমাস পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক গমন ও চলতি নভেম্বরে রাত্রীযাপন নিষিদ্ধ রাখাসহ ১২টি নির্দেশনা জারি করে সরকার। শুধু মাঝে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুইমাস রাত্রীযাপন করা যাবে। সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে পর্যটকদের সাড়া না পাওয়ায় জাহাজ চলাচল শুরু হবে না বলে জানিয়েছেন জাহাজ মালিকরা।

সেন্টমার্টিন নৌরুটের পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর জানান, রাত্রীযাপন নিষেধ থাকায় সেন্টমার্টিন যেতে পর্যটকরা সাড়া দেননি। তাই অনুমতি মিললেও ১ নভেম্বর (আজ) থেকে জাহাজ চলাচল করবে না। পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মক্ত করা হয়েছে। এখন প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেখানে যেতে পারবেন। আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করবে।

তিনি জানান, গত বছরের মতো এবারও কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। আইনগত বিধি নিষেধ থাকায় উখিয়ার ইনানী থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ নেই। সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

সেন্টমার্টিন নৌরুটের পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয় যে বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিয়েছে তাতে অনুমতি দেয়ারও দরকার নেই। দিনে গিয়ে দিনে চলে আসতে হলে যাওয়ারই দরকার নেই। কেননা কক্সবাজার থেকে রওয়ানা হয়ে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে বিকাল নেমে আসবে। নেমেই ঘুরাফেরার সুযোগ সময় হাতে থাকবে না। কেননা আবারো ফিরতি জাহাজ ধরতে হবে। ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট থেকে জাহাজ ছাড়তে পারলে অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা দ্বীপে বেড়ানো যেতো। তাও দেয়া হলো না। এখন দীর্ঘ সাগরপথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা কেন সেখানে যাবেন ?’

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের জন্য পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে। এসব নিশ্চিত করার জন্য ট্যুরিজম বোর্ডের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিনও বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সেন্টমার্টিন যেতে যে ১২ নির্দেশনা মানতে হবে : সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ১২টি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বরে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুকঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সিবাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে।

নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলি লিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সেন্টমার্টিন নৌরুটের পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহম্মদ বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ভ্রমণ নিয়ে সরকার যা করছে তা পর্যটক, পর্যটনসেবী এবং সেন্টমার্টিনবাসীর সাথে মারাত্মক রকম তামাশা। জাহাজ থেকে নামতে না পারলে পর্যটকরা কেন সেখানে যাবেন? এভাবে কড়াকড়ি করে সেন্টমার্টিনবাসীর মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। কারণ পর্যটক গমণ না করায় সেখানকার জনসাধারণ চরম অভাবে রয়েছেন। সে জবাব সরকার দেয় না।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব : প্রধান উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধজিওবি ফান্ডে ঋণের শর্ত মন্ত্রণালয়ের