সেই ৬ তলা ভবন ভাঙা শুরু

দেওয়ানহাট খান কমপ্লেক্স ।। নয় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েও উচ্ছেদই করতে হলো ব্যবসায়ীদের

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

প্রায় নয় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েও উচ্ছেদ করতে হলো ব্যবসায়ীদের। বহুভাবে চেষ্টা করেও ব্যবসায়ীদের সরাতে না পারায় অবশেষে গতকাল দেওয়ানহাট খান কমপ্লেক্সের ছয় তলা ভবনটির ৬৫ জনের মতো ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করে সিডিএ। নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এ্যালাইমেন্টের মধ্যে পড়া খান কমপ্লেক্সের জন্য প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। গতকাল ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের পর প্রকল্পের কাজ পুরোদমে পরিচালিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে খান কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীরা উচ্ছেদ অভিযানে তাদের লাখ লাখ টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এ্যালাইমেন্টের মধ্যে পড়ে যায় খান বাহাদুর আবদুল হাকিম মিয়া ওয়াকফ স্টেটের সম্পত্তি দেওয়ানহাটস্থ খান কমপ্লেক্সের ছয় তলা ভবন। ওয়াকফ এস্টেটের এই ভবনটিতে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা সালামি নিয়ে ২০০৪ সালে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। প্রতিটি দোকানের ভাড়া ছিল ৩ থেকে ৫শ’ টাকা। সর্বশেষ ২০২২ সালে এসে দোকানের ভাড়া দাঁড়ায় ৮শ’ টাকায়। অপরদিকে এক একটি দোকান ৪/৫ বার পর্যন্ত হাতবদল হয়েছে। ভবনটি সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় এটি ভাঙ্গা জরুরি হয়ে উঠে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবনটি ভাঙ্গার প্রক্রিয়া শুরু করে বেশ আগে। নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সিডিএ ভবনটির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়। ভবনটির মূল্য হিসেবে এই ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়, জায়গার মূল্য বাবদ ক্ষতিপূরণ প্রদান করার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু বিশাল অংকের টাকা পরিশোধ করেও জায়গাটি বুঝে না পেয়ে সিডিএ প্রকল্পের কাজ চালাতে পারছিল না। অন্যদিকে সিডিএ ১ কোটি ৩২ লাখ টাকায় ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেয়। নিলাম গ্রহিতা টাকা দিয়েও ভবনটি বুঝে পাচ্ছিল না। ব্যবসায়ীদের বাধার কারণে ভবনটি নিয়ে বড় রকমের জটিলতা তৈরি হয়েছিল।
খান বাহাদুর আবদুল হাকিম মিয়া ওয়াকফ এস্টেট ব্যবসায়ীদের সালামির টাকা ফেরত দেয়ার প্রস্তাব করলেও তারা তা প্রত্যাখান করে। তারা প্রতিটি দোকানের জন্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে জানান যে, ২০০৪ সালে তারা যখন সালামির ৪ লাখ টাকা প্রদান করেছিলেন সেই টাকা এতদিন ব্যাংকে রাখলে ২০ লাখ টাকা হতো। ওয়াকফ এস্টেটের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, সালামি দিয়েছেন বলেই এর সুফল হিসেবে ৪/৫শ’ টাকা ভাড়ায় দোকান পেয়েছেন। অন্যথায় এই ধরনের একটি দোকানের ভাড়াইতো ১০/১২ হাজার টাকা হতো। মোতোয়াল্লীর সাথে ব্যবসায়ীদের এই বিরোধেই শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঝুঁলে যায়।
সিডিএ ইতোপূর্বে নিলামে ভবনটি বিক্রি করার সময় ব্যবসায়ীরা উচ্চ আদালতে গিয়ে রিট করে স্থগিতাদেশ প্রদানের আবেদন করেন। কিন্তু আদালত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বিবেচনায় স্থগিতাদেশ প্রদান না করে রুল জারি করেন।
আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা না দেয়ায় সিডিএ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। মোতোয়াল্লীর পক্ষ থেকেও ভবনটি সিডিএকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতকাল সিডিএ কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে ভবনটি নিলাম গ্রহিতাকে বুঝিয়ে দেয়। গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৬ তলা ভবনটি ভাঙ্গার কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় ব্যবসায়ীদের বের করে দিয়ে দোকানগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। ভবনটি নিলাম গ্রহিতাকে বুঝিয়ে দেন সিডিএ ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আকতার চৌধুরী। এ সময় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘আন্দোলনের নামে অরাজকতা করলে ছাড় নয়’
পরবর্তী নিবন্ধপিবিআই প্রধান বনজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে বাবুলের মামলার আবেদন