যিনি চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ (এলএ) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পদায়িত ছিলেন। যিনি উপর মহলের তদবিরে নিজের সুবিধাজনক স্থানে পোস্টিং নিতেন। এলএ ক্ষতিপূরণের কমিশন বাণিজ্যে মেতে উঠতেন। খোঁজ নিতেন সরকারি ভবিষ্যৎ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের। সেই ‘ক্ষমতাধর’ সার্ভেয়র ইব্রাহীম খলিলকে বদলি করা হয়েছে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে। দেশের সবচেয়ে আলোচিত কক্সবাজার এলএ শাখা হতে গত ৭ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে রংপুরে বদলি করা হয়। মূলত গত ৩ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে চট্টগ্রাম ও কঙবাজার এলএ শাখার বিতর্কিতদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পরই তাকে বদলি করা হয় বলে জানায় কঙবাজার এলএ শাখার একটি বিশ্বস্ত সূত্র।
সূত্র জানায়, কয়েকবছর আগে নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় পদায়িত থাকার সময়ে এলএ ক্ষতিপূরণে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে। একইভাবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বদলি হয়ে এসেই বিস্তার করেন কমিশন বাণিজ্যের জাল। দুদকের হাতে গ্রেপ্তার চেইনম্যান নজরুল ইসলামই তাকে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামে আনতে সহযোগিতা দেন। নজরুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইব্রাহীম এলএ শাখার নির্ধারিত চেয়ারে বসে কখনো দাপ্তরিক কাজ করেননি। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ১৩৭ নং কক্ষেই ছিল তার নিয়মিত পদচারণা। ওই কক্ষটি সনাতন ধর্মালম্বীদের দুর্গাপূজোর সময় কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বছরের বাকী সময় ওই কক্ষটি ব্যবহার হতো না। নির্বিঘ্নে কমিশন বাণিজ্যের সুবিধার্থে ১৩৭ নম্বর কক্ষটিকেই নিয়মিত অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন সার্ভেয়র ইব্রাহীম। দুদকের অভিযান ও মামলার পর চট্টগ্রাম এলএ শাখা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে আরো বেশি কমিশন বাণিজ্যের সুবিধার্থে কঙবাজারে বদলি হয়ে যান তিনি। বর্তমানে কঙবাজারে দেশের সবচেয়ে বেশি এবং বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-১ অধিশাখার উপসচিব মমতাজ বেগম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে চট্টগ্রাম এলএ শাখার সার্ভেয়র ইব্রাহীমকে (সংযুক্ত মীরসরাই উপজেলা ভূমি অফিস) কঙবাজার এলএ শাখায় সংযুক্তি দিয়ে বদলি করা হয়। ইব্রাহীম বদলি হয়ে কঙবাজার এলএ শাখায় যোগ দিয়েই পূর্বের ন্যায় জড়িয়ে পড়েন কমিশন ব্যবসায়। চট্টগ্রামের কয়েকজন দালালকেও সাথে নেন তিনি। এরপর ৩ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে “চট্টগ্রাম এলএ শাখার বিতর্কিতরা কঙবাজারে, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সার্ভেয়র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বদলি, পুরনো দালালরা জড়িয়ে পড়ছেন নতুন প্রকল্পে” অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দৈনিক আজাদীতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কঙবাজার জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। টনকনড়ে ভূমি মন্ত্রণালয়েরও। ফলশ্রুতিতে গত ৭ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের আরেক অফিস আদেশে (সূত্র- ৩১.০০.০০০০.০৪৬.২৭.০৪৫.১৭.৭৩৩) কঙবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখায় সংযুক্তির আদেশ বাতিলপূর্বক তাঁকে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বদলি করা হয়। ওই আদেশেও ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-১ অধিশাখার উপসচিব মমতাজ বেগম স্বাক্ষর করেন।