বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে পুরনো কর্মস্থল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেই ফের যোগদানের আবেদন করেছিলেন হাসপাতালটির হিসাবরক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মো. ফোরকান। গতবছরের ২৫ অক্টোবর ফোরকান এ সংক্রান্ত আবেদন জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বদলি আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ পেয়েছেন দাবি করে পূর্বের পদ ও কর্মস্থলে যোগদানে এ আবেদন করেছিলেন তিনি। যদিও এ বিষয়ে মতামত ও নির্দেশনা চেয়ে ফোরকানের এ সংক্রান্ত আবেদনটি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বরাবর পাঠায় জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে ২৬ অক্টোবর আবেদনটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইন শাখায় প্রেরণ করা হয়। এর মাঝে প্রায় সাড়ে তিন মাস পার হয়ে যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা আসেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা না পাওয়ায় ফোরকানের যোগদানও ঝুলিয়ে রাখে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময়ে তার (হিসাবরক্ষকের) কক্ষটি তালাবদ্ধ ছিল। ফোরকান চাবি বুঝিয়ে না দেয়ায় দীর্ঘদিন কক্ষটি খুলতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে হাসপাতালের পক্ষ থেকেও সেখানে আরেকটি তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের একটি রায়ের কপি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন মো. ফোরকান।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে তাকে পূর্বের পদ ও কর্মস্থলে যোগদানের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের নির্দেশনা চান। যেহেতু আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, সেহেতু মো. ফোরকানের যোগদানপত্র গ্রহণের নির্দেশনা দেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। এর প্রেক্ষিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ফোরকানের যোগদানপত্র গ্রহণ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই নিয়মিত অফিস করছেন হাসপাতালটির আলোচিত এ কর্মচারী। ফোরকানের যোগদানপত্র গ্রহণ ও নিয়মিত অফিস করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। যদিও তাকে তেমন কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি বলে দাবি হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের।
এদিকে, আইন শাখার উপ–পরিচালক ডা. পরিমল কুমার ঘোষের স্বাক্ষরে গত ৬ মার্চ একটি চিঠি ইস্যু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরাবর ইস্যু করা এ চিঠিতে মো. ফোরকানের যোগদান বিধি সম্মত নয় মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককেও এ চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকানের যোগদানের বিষয়ে মতামত প্রদান সংক্রান্ত এ চিঠিতে বলা হয়– ‘হিসাবরক্ষক মো. ফোরকান বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে বিজ্ঞ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, ঢাকায় মামলা দায়ের করেন। দায়েরকৃত মামলায় বদলি আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশের আবেদন করলে আদালত তা খারিজ সাপেক্ষে সরকারের পক্ষে রায় প্রদান করেন। বাদী পরবর্তীতে প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনাল মিস আপীল দায়ের করলে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল পুনরায় সরকারের পক্ষে রায় বহাল রাখেন। পরে বাদী মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে মামলা দায়ের করেন। আদালত বদলি আদেশ ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। স্থগিতাদেশ খারিজের জন্য কৌসুলি নিয়োগ করা হয়েছে। বাদী কর্তৃক দায়েরকৃত মূল মামলা চলমান। এমতাবস্থায় হিসাবরক্ষক মো. ফোরকানের যোগদানের বিষয়টি বিধি সম্মত নয় বলে প্রতীয়মান হয় মর্মে চিঠিতে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ চিঠি ইস্যুর আগেই (২২ ফেব্রুয়ারি) পুরনো কর্মস্থলের স্ব–পদে যোগদান করেছেন মো. ফোরকান। অর্থাৎ তার যোগদানের প্রায় ১৫ দিন পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু হয়। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ সংক্রান্ত চিঠি এখনো হাতে পাননি বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি গতকাল আজাদীকে বলেন, এরকম একটি চিঠির বিষয়ে শুনেছি। তবে এখনো হাতে আসেনি। তাছাড়া ফোরকানের যোগদানের বিষয়ে প্রথম দিকে মতামত চেয়ে দেয়া চিঠির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ নির্দেশনা দিয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু ফোরকান সম্প্রতি আদালতের আরো একটি রায় সাবমিট করেছে। যাতে তার যোগদানপত্র গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আদালতের রায় ও নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ফোরকানের যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ সংক্রান্ত চিঠি না পাওয়ার কথা জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের পদে যোগ দেয় ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তবে প্রতিবেদকের হাতে থাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ চিঠি পাঠানো হয় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে। পরে তিনি এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে কথা বলেন। এ বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন গতকাল আজাদীকে বলেন, অনেকদিন তার (ফোরকানের) যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তবে সম্প্রতি সে আদালতের একটি রায়ের কপি জমা দেয়। রায়ে ফোরকানকে স্ব–পদে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মূলত আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে তার যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষকের চলতি দায়িত্বে থাকা মো. ফোরকানকে গতবছরের ১৭ জুলাই এক আদেশে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. সামিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে ৫ দিনের মধ্যে কর্মস্থল থেকে ছাড়পত্র নিতে বলা হয়। অন্যথায় আদেশের ৬ষ্ঠ দিন থেকে সরাসরি অব্যাহতি পাইয়াছেন বলিয়া গন্য হইবে মর্মে আদেশে উল্লেখ করা হয়।