সেই পুলিশের সাড়ে ২২ বছর সাজা

জর্জ ফ্লয়েড হত্যা

| রবিবার , ২৭ জুন, ২০২১ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেয়াপলিসে আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার দায়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনকে ২২ বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। শুক্রবার এই দণ্ড ঘোষণা করে বিচারক বলেছেন, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অপব্যবহার এবং বিশ্বাসভঙ্গ করার পাশাপাশি যে নিষ্ঠুরতা ডেরেক শভিন দেখিয়েছেন, সে কারণে তাকে এই সাজা ভোগ করতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
গত বছর মে মাসে জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর ফ্লয়েডের (৪৮) ঘাড়ে শভিনের (৪৫) হাঁটু গেড়ে বসে থাকার ৯ মিনিটের ভিডিও সাড়া বিশ্বে সমালোচনার ঝড় তোলে। সেসময় ফ্লয়েড বারবার আকুতি জানিয়ে বলছিলেন, তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। কিন্তু তাতে মন গলেনি ঘাড়ে চেপে বসা পুলিশ কর্মকর্তার। ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর বর্ণবাদ ও পুলিশি বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে শুরু হয় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। নিরস্ত্র এ কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর মাসখানেক পর তার পরিবার শহর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে। শুনানিতে শভিনের আইনজীবী ওই হত্যাকাণ্ডকে বর্ণনা করেন ‘সরল বিশ্বাসের ভুল হিসেবে’। কিন্তু গত ২১ এপ্রিল ১২ সদস্যের জুরি বোর্ড ডেরেক শভিনকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার তার সাজা ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্রের আদালত।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেরেক শভিন বাকি জীবন একজন দাগি আসামি হয়ে থাকবেন। তিনি কখনোই অস্ত্র বহন করার অনুমতি পাবেন না। ফ্লয়েডের পরিবার এবং তার সমর্থকরা আদালতের এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের পক্ষের আইনজীবী বেন ক্রাম্প এক টুইটে বলেছেন, ‘ঐতিহাসিক এই রায় অপরাধীকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করেছে, ফ্লয়েডের পরিবার এবং আমাদের সমাজের ক্ষতকে সারিয়ে তোলার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে।’ ফ্লয়েডের বোন ব্রিজিত ফ্লয়েড বলেছেন, ‘পুলিশের নির্মমতাকে রাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছে, এ রায় সে কথাই বলছে। তবে আমাদের আরও অনেক পথ যেতে হবে।’
বিবিসি লিখেছে, এ মামলার শুনানিতে ফ্লয়েডের ভাই টেরেন্স ফ্লয়েড আসামির সর্বোচ্চ সাজা, অর্থাৎ ৪০ বছরের কারাদণ্ড চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘কেন আমি ওই শাস্তি চাই? তুমি আসলে কী ভেবেছিলে? আমার ভাইয়ের ঘাড়ে যখন হাঁটু চেপে বসেছিলে, কী খেলা করছিল তোমার মাথায়?’ ফ্লয়েডের সাত বছরের মেয়ে জিয়ানা এক ভিডিওতে জানিয়েছে তার মনের কষ্টের কথা। সে বলেছে, বাবাকে সে ভালোবাসে, তাকে খুব ‘মিস করে’।
হত্যার আসামি শভিন শুনানিতে বলেন, তিনি ফ্লয়েডের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে হয়ত তারা এমন কোনো তথ্য পাবে, যা তাদের মনে একটু শান্তি দিতে পারবে। কিন্তু যা ঘটেছে, সেজন্য একবারও ক্ষমা চাননি সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। তার মা ক্যারোলিন পলেন্টি আদালতে দাবি করেন, শভিন একজন ‘ভালো মানুষ’। তিনি বলেন, “আমি জানি, তুমি নিষ্পাপ, সব সময় আমি সেটাই বিশ্বাস করব।”
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মে মাসে এক দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট কেনেন জর্জ ফ্লয়েড। কিন্তু দাম চুকাতে তিনি জাল নোট দিয়েছেন বলে সন্দেহ হয় দোকানির। ফ্লয়েড সিগারেটের প্যাকেট ফেরত দিতে রাজি না হওয়ায় ওই দোকানি পুলিশ ডাকেন। পুলিশ এসে ফ্লয়েডকে তার গাড়ি থেকে বের করে এবং হাতকড়া পরায়। এরপর পুলিশ ফ্লয়েডকে তাদের গাড়িতে তুলতে চাইলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে মাটিতে পেড়ে ফেলে তার ওপর চেপে বসে। শভিন তার হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেন ফ্লয়েডের ঘাড়। টানা নয় মিনিট ধরে তিনি ঘাড়ের ওপর চাপ দিয়ে চলেন। ফ্লয়েড বার বার বলছিলেন- ‘প্লিজ, প্লিজ প্লিজৃ আমি শ্বাস নিতে পারছি না।’ অ্যাম্বুলেন্স যখন এল, ততক্ষণে ফ্লয়েড স্থির হয়ে গেছেন। ঘণ্টাখানেক পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজার্মানিতে ছুরি হামলায় নিহত ৩
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের কোচিং স্টাফ দলে হেরাথ-প্রিন্স