সেই নুর চেহের পেলেন পাঁচ লাখ টাকার চেক

প্রতিশ্রুতি রাখলেন জেলা প্রশাসক

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ

চল্লিশ বছর আগে নূর চেহের বেগমের জমি অধিগ্রহণ হয়। তখন তার বয়স ছিল ৪৭। এখন তিনি ৮৭ বছরের বৃদ্ধা। এতগুলো বছর কেটে গেলেও মেলেনি জমির ক্ষতিপূরণের টাকা। ৩৮ শতাংশ সেই জমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন ৪০ বছর ধরে। গত আগস্টে দুদকের গণশুনানিতে মর্মস্পর্শী এসব কথা তুলে ধরেন নুর চেহেরের ছেলে মিজানুর রহমান। তখন পাশেই ছিলেন বৃদ্ধা নুর চেহের। এক পর্যায়ে মাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ সময় উপস্থিত থাকা দর্শকদের মধ্যে নেমে আসে সুনশান নীরবতা। এতগুলো বছর পরও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি শুনে সেদিন বিস্মিত হন দুদক কমিশনার মিজানুর রহমানও। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক বলেন,

আমি দায়িত্ব নেয়ার পর নুর চেহের বেগম আমার কাছে একাধিকবার এসেছেন। অর্থ আত্মসাৎকারী যারা রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন। যেহেতু মামলাটি বিচারাধীন সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তবু আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য হিসেবে ৫ লাখ টাকা তাকে দিতে পারি। এছাড়া উক্ত বিষয়ে চলমান মামলাগুলো কী অবস্থায় রয়েছে তা দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চমেক হাসপাতালের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত আগস্টের সেই গণশুনানি, জেলা প্রশাসকের প্রতিশ্রুতির কথা হয়তো অনেকে ভুলে গেছেন। কিন্তু ভুলেননি জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গতকাল এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নুর চেহের বেগমের হাতে তিনি প্রতিশ্রুত পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাঁর ছেলে, মেয়ে, নাতিনাতনি। চেক গ্রহণের সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। বারবার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন জেলা প্রশাসক ও তার টিমের প্রতি। ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, যেই টাকা তারা ৪০ বছরে পাননি, জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতায় মাত্র ৪ মাসে তারা সেই টাকা পেয়েছেন। দুদকের সেই গণশুনানিতে মিজানুর বলেছিলেন, ভূমি অধিগ্রহণের সময় বাবা বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে বাবা মারা গেছেন। কিন্তু আমরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি। মা শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। কতদিন বাঁচবেন জানি না। মায়ের মৃত্যুর আগে যাতে ক্ষতিপূরণের টাকাটা পাই সে চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেছিলেন, ১৯৮০ সালে ৩৮ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিজেদের জমি হওয়া সত্বেও জেলা প্রশাসনের ভুলে ক্ষতিপূরণের টাকা পান অন্যরা। এরপর থেকে নিজের ন্যায্য পাওনা বুঝে পেতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি সংরক্ষণ এলাকা বৃদ্ধির জন্য ১৯৮১ সালে দক্ষিণ হালিশহর মৌজায় মৌলভী বশির উল্লাহর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ক্ষতিপূরণের টাকা হিসেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৭ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৪ টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেয়। বশির উল্লাহর মৃত্যুতে তাঁর ছয় ছেলে ওয়ারিশ হলেও, দুই ছেলে আবুল খায়ের ও আবু ছৈয়দ উক্ত টাকা উত্তোলন করেন। এতে বঞ্চিত হন অপর চার ছেলে। বঞ্চিত চার ছেলের একজনের ওয়ারিশ হলেন নুর চেহের বেগম এবং তার পরিবার। একপর্যায়ে নুর চেহেরের অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন সার্টিফিকেট মামলা রুজু করে বঞ্চিত চার ছেলের হিস্যা ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৮৪৫ টাকা এলএ নথিতে ফেরত প্রদানের জন্য আবুল খায়ের ও আবু ছৈয়দের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসোনালি প্রজন্মের অবসান বিদায় বেলজিয়ামের
পরবর্তী নিবন্ধউখিয়া সীমান্তে পাঁচ কোটি টাকার আইস জব্দ