সেই অপমানের জবাব মাঠেই দিল পাকিস্তান

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

প্রতিশোধের আরো একটি ম্যাচে জিতল পাকিস্তান। পাকিস্তানের মাটি থেকে সফল বাতিল করে চলে আসায় নিউজিল্যান্ডের সাথে একটি বৈরীতা সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানের। আর সেই অপমানের জবাব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছে পাকিস্তান বিশ্বকাপকে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি রমিজ রাজা ক্রিকেটারদের বলেছিলেন বিশ্বকাপে গিয়ে তারা যেন নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেয়।
ক্রিকেটাররা তাদের চেয়ারম্যানের কথা রেখেছে। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে উড়িয়ে দেওয়ার পর এবার নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়ে যেন মনের ঝাল মেঠাল। এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারা। নিউজিল্যান্ডকে শিক্ষা দেওয়াও হলো আবার সেমিফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়াও হলো। শারজায় নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিল পাকিস্তান। তবে প্রথম ম্যাচে ভারতকে যেভাবে পিষ্ট করেছিল নিউজিল্যান্ডকে ততটা করেনি। তবে ব্যাট-বলে দুর্দান্ত এক পাকিস্তানকে দেখা গেল এই ম্যাচেও। আগের ম্যাচে বল হাতে আগুন ঝরিয়েছিলেন শাহিনশাহ আফ্রিদি। আর এ ম্যাচে কিউইদের দিকে আগুনের গোলা ছুড়েছেন হারিস রউফ। আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে কাইকে নামতে দেননি বাবর আজম এবং রিজওয়ান। এই ম্যাচে অভিজ্ঞ শোয়েব মালিকের সাথে রিজওয়ান এবং আসিফ আলি দলকে পৌঁছে দিয়েছে জয়ের সোনালী বন্দরে। ‘পুরানো চাল ভাতে বাড়ে’ প্রবাদের মত অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক দেখালেন কিভাবে ম্যাচকে বের করে আনতে হয়।
শেষ কয় ওভারে ঝুঁকিটা নেবেন তেমন পরিকল্পনা থেকেই হয়তো ১৭ ওভার থেকে মার শুরু করেন। আর দুই ওভারেই ম্যাচ নিয়ে আসেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে। আর তাকে অনুসরণ করেছেন তরুণ আসিফ আলি। দুজনে মিলে ৪৮ রানের জুটি গড়ে ৮ বল বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত করে। সিরিজ বাতিলের জবাবটা এর চাইতে উপযুক্ত আর কিভাবেইবা দিতে পারতো পাকিস্তান।
টানা দ্বিতীয় ম্যাচে টসে জিতল পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। দ্বিতীয় ম্যাচেও প্রথমে বল করতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি পাকিস্তান দলপতি। আর বোলাররা ঠিকই অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করতে বেশি সময় নেয়নি। আগের ম্যাচে তোপ দাগিয়েছিলেন শাহিনশাহ আফ্রিদি। যদিও নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল এবং ড্যারিল মিচেল ৩৬ রান তুলে ফেলেছিল। তবে রানের গতি ছিল বেশ মন্থর। ষষ্ট ওভারে প্রথম আঘাত হানেন হারিস রউফ।
২০ বলে ১৭ রান করা গাপটিলকে বোল্ড করে ফেরান রউফ। দ্বিতীয় উইকেটে ড্যারিল মিচেল এবং অধিনায়ক উইলিয়ামসনও বেশিদূর এগুতে পারেননি। এজুটি ভাঙেন ইমাদ ওয়াসিম। তার শিকার মিচেল। ফখর জামানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ২০ বলে ২৭ রান করা মিচেল। জেমস নিশামকে দুই বলের বেশি খেলতে দেননি অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ। ৫৬ রানে ৩ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন উইলিয়ামসন এবং ডেভন কনওয়ে। কিন্তু ৩৪ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি দুজন। হাসান আলির বলে রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফিরেন কিউই অধিনায়ক। ২৬ বলে ২৫ রান আসে উইলিয়ামসনের ব্যাট থেকে। তবে নিউজিল্যান্ডকে বড় স্কোরার গড়ার স্বপ্ন শেষ করে দেন হারিস রউফ। ১৮তম ওভারে তিন বলের ব্যবধানে কনওয়ে এবং ফিলিপসকে তুলে নিলে হোচট খায় কিউইদের বড় ইনিংসের স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত ১৩৪ রানে থামতে হয় নিউজিল্যান্ডকে।
কনওয়ে ২৪ বলে ২৭ এবং গ্লেন ফিলিপস ১৫ বলে করেন ১৩ রান। পাকিস্তানের পক্ষে সফল বোলার ২২ রানে ৪ উইকেট নেওয়া হারিস রউফ। হাসান আলি একটি ক্যাচ না ছাড়লে তার উইকেট ৫টি হতে পারতো। একটি করে উইকেট নিয়েছেন শাহিনশাহ আফ্রিদি, ইমাদ ওয়াসিম এবং মোহাম্মদ হাফিজ।
১৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা পাকিস্তান বেশ ধীর গতিতেই এগুচ্ছিল। আগের ম্যাচে দুই ওপেনার বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান রেকর্ড গড়লেও গতকাল পারেননি ২৮ রানের বেশি যোগ করতে। টিম সাউদির বলে বোল্ড হন বাবর আজম মাত্র ৯ রান করে। এরপর রানের গতি আরো ধীর হতে থাকে। যখনই হাত খুলে মারতে গেছেন ফখর জামান তখনই আঘাত ইশ শোধির। রিভিও নিয়ে ফখর জামানকে ফেরালেন এই স্পিনার। ১১ রান করতে একটি ছক্কা মারলেও ১৭ বল খরচ করেন ফখর জামান। হাত খোলার চেষ্টায় ব্যর্থ হলেন অভিজ্ঞ হাফিজও। স্যান্টনারের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে একেবারে সীমানায় কনওয়ের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হন ৬ বলে এক ছক্কায় ১১ রান করা হাফিজ। পরের ওভারে রণে ভঙ্গ দিলেন শুরু থেকেই ভাল খেলতে থাকা রিজওয়ান। জায়গায় দাঁড়িয়ে ইশ শোধিকে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন রিজওয়ান। ৩৪ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৩৩ রান করেন এই ওপেনার। ১১ রান করে ইমাদ ওয়াসিমও ফিরে গেলে বলের সাথে রানের ব্যবধান বাড়তে থাকে। এক সময় তা ওভার প্রতি ৯ রান ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। সে অবস্থায় আসিফ আলিকে নিয়ে হাত খোলার চেষ্টা করেন অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক। টিম সাউদির করা ১৭ তম ওভার থেকে ২টি ছক্কা সহ ১৩ রান নেন শোয়েব মালিক। পরের ওভারে সান্টনারের কাছ থেকে নেন ১৫ রান। আর তাতেই ম্যাচ চলে আসে পাকিস্তানের নাগালে। শেষ দুই ওভারে ৯ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু চার বলের বেশি ব্যবহার করেনি আসিফ আলি।
৮ বল বাকি থাকতে পৌঁছে যান জয়ের বন্দরে। ২০ বলে ২৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন শোয়েব মালিক। আর আসিফ আলি ২৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন মাত্র ১২ বরে। যেখানে তিনটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। তবে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি উঠেছে নিউজিল্যান্ডকে ১৩৪ রানে থামিয়ে দেওয়া হারিস রউফের হাতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ বিষয়ে শুনানি ১৫ নভেম্বর
পরবর্তী নিবন্ধচার বিভাগে নতুন মৃত্যু নেই