সৃষ্টি সুখের উল্লাস

মাহবুবা ছন্দা | মঙ্গলবার , ২৭ জুন, ২০২৩ at ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ

মাঠে ঘাসের সৌন্দর্য দেখে শ্বাতীর মন ভরে উঠে। দিনের পর দিন সুন্দর অন্ধকার আসে তবুও সে নক্ষত্র দেখতে পায় এই সবের চেয়ে অন্য কোনো সৌন্দর্য বা সান্ত্বনা শ্বাতী চায় না। মনে মনে ভাবে, আসল কথাটা কবুল করো, তুমি দুর্বল, অযোগ্য। এই পৃথিবীতে জীবিকার যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার অযোগ্য। এই তো বোকার মতো বসে আছো কলম হাতে। সামনে সাদা খাতার পাতা হাওয়ায় উড়ছে। কতক্ষণ! কেন? আঙুলে শক্তি নেই তাই? মাথায় লেখার বিদ্যে নেই? অবসরে শুধু সৌন্দর্য নিয়ে বেঁচে থাকো।

মোমের বাতির মতো ও জোনাকির মতো জ্বলো। চিন্তা ও কল্পনার সৌন্দর্য বাড়াও। শান্তি পাবে। গভীর শান্তি। সান্ত্বনাও পাবে। গভীর রাতে শ্বাতীর মনে কেমন একটা ব্যথা এলো।

একটা টুল টেনে খাতাকলম নিয়ে বসলো। ভাবছিলো তার মতো লেখকের জীবন কী নিষ্ফল! অন্য সব লেখকেরা কাজ করে, কথা বলে, কথা বলে আর কাজ করে সব, ফেসবুকেও থাকে, তারপর নির্বিঘ্নে ঘুমায়। স্বাভাবিকভাবে অন্য লেখকরা যা লিখতে পারেসেও যদি তাই সেভাবেই লিখতে পারতো। তাহলে শান্তি পেতো। মনের সঙ্গে বনিবনা করে শ্রেষ্ঠ লেখকদের পথে চলতেভাবতে পারত তাহলে দ্রুত শক্তিশালী লেখক হিসেবে পরিচিত পেতো। পৃথিবীটা বড়ো শূন্য লাগে শ্বাতীর। তবুও লেখা চালিয়ে যায়।

কারণ লেখাই তার একমাত্র প্রেমিক। আকাশ জুড়ে যখন মেঘের ঘনঘটা তখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধুই ব্যথার্ত বৃষ্টির অনুরণন। তখন চিত্ত উদ্বেল হয়ে উঠে শ্বাতীর। হৃদয়ের অনেক না বলা কথারা স্পন্দিত হতে চায়। অনেক ব্যথা ছুঁয়ে যায় শ্বাতীর মন। তখন কলম ছাড়া কী উপায় তার? সদ্য অতীত হয়ে যাওয়া ঘটনাগুলোর উপর আলোকপাত করার চেষ্টা তাই লেখায়। স্রোতস্বিনীর স্বপ্নেরা এগিয়ে আসে। সোনার কলম এগিয়ে চলে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। শ্বাতী কল্পনা করতে পারে। কিন্তু লেখায় লেখক হিসেবে সিদ্ধহস্ত নয়। তাই তার চিন্তা ও কল্পনা কাজে আসে না। লেখক হয়ে উঠাও আর হয়ে উঠে না। এই লোকসানকে অপর পাঁচজনে কী রকমে ভাবেন, শ্বাতী তা জানে না। আর তাই নিষ্ফল লেখক হয়েও ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে শ্বাতী প্রতিদিন সকালে এবং রাত্রির গভীরে নিজের কাছে উচ্চারণ করে আহা! জীবন কী বিচিত্র! জীবন কী বিস্ময়কররূপে শিক্ষাময়! বেঁচে থাকাটাই সার্থকতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাগালের বাইরে কোরবানীর পশু: সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধবিবাহ বিচ্ছেদ দুটি জীবনের বিপর্যয়