ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সূর্যসৈনিক, বিশিষ্ট বিপ্লবী ও রাজনীতিবিদ সুভাষচন্দ্র বসু বিশেষভাবে পরিচিত ‘নেতাজী’ নামে। ভারতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী ধারার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই নেতা বিখ্যাত রাজনৈতিক দল ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন চোখে, মানবমুক্তির আকাঙ্ক্ষায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অংশ নিয়েছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবে। আজ তাঁর ১২৩তম জন্মবার্ষিকী।
সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি বাবা জানকীনাথ বসুর কর্মস্থল কটকে। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হলেও ইংরেজদের অধীনে কাজ করতে হবে বলে সেই চাকরিতে যোগ দেন নি। তাঁর মূল্যবোধের ভিত্তি গড়ে উঠেছিল একইসাথে জাতীয়তাবাদী ও সমাজতান্ত্রিক চেতনায়। রাজনৈতিক জীবনে নেতাজীর প্রেরণা ছিল দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। স্বামী বিবেকানন্দ এবং শ্রী অরবিন্দের চিন্তাধারায়ও প্রভাবিত ছিলেন তিনি। ১৯২৮ সালে সুভাষচন্দ্র ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সম্পাদক এবং ১৯৩০ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যে তিনি ছিলেন আপোষহীন। মাহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতিতে সমর্থন ছিল না তাঁর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অক্ষশক্তির সাহায্যে আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন সুভাষ। ১৯৪৩ সালে তাঁর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ সরকার গঠিত হয় এবং এই ফৌজ নিয়েই তিনি সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। আজাদ হিন্দ ফৌজের সদর দফতর ছিল তদানীন্তন রেঙ্গুনে। দুঃসাহসী, নির্ভিক, মহান এই দেশপ্রেমিকের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ ব্রিটিশদের পরাজিত করে ইম্ফল ও কোহিমায় দুটি বিমান ঘাঁটি দখল করে নেয়। দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে আজীবন সংগ্রামী সুভাষচন্দ্র বসু একাধিকবার জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। তবু তিনি তাঁর আদর্শ থেকে সরে আসেন নি। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট ফরমোজার তাইহুকু বিমান বন্দরে এক বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষচন্দ্র বসু নিহত হন বলে প্রচারিত। ‘অ্যান ইন্ডিয়ান পিলগ্রিম’ নামে একখানা আত্মজীবনী লিখছিলেন তিনি। সেটি অসমাপ্ত থেকে যায়। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তরুণের স্বপ্ন’।