সুপার এইটের আরো কাছে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ১৪ জুন, ২০২৪ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্ব নিশ্চিত করতে অপেক্ষা বাড়ছিল বাংলাদেশের। আর সে পথে টাইগারদের বাধা ছিল নেদারল্যান্ডস এবং নেপাল। গতকাল ডাচ বাধা অতিক্রম করে শেষ আটের পথে আরো এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

চাপ সামলে বেরিয়ে আসতে পারাটাই বড় ক্রিকেটারের পরিচয়। যেটি গতকাল সাকিব আল হাসান দিতে পারলেও লিটনশান্ত দিতে পারেননি। সবচাইতে বেশি সমালোচনার মুখে পড়া সাকিব বেরিয়ে এলেন ব্যর্থতার বলয় ভেঙে। সঙ্গে যথারীতি লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের ঘূর্ণি জাদু ছিল অব্যাহত। মোস্তাফিজ, তানজিম সাকিব, তাসকিনরা রাখলেন দায়িত্বশীল ভূমিকা। সব মিলিয়ে এক ম্যাচ পর আবার জয়ের ধারায় ফিরল বাংলাদেশ। যে ফেরাটা বাংলাদেশকে সুপার এইট পর্বের পথে অনেকটাই এগিয়ে দিল। গতরাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিনসেন্টে নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়ে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে হারেরও যেন প্রতিশোধ নিল টাইগাররা। সাকিব, তানজিদ তামিম, মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। আর সে ভিতের উপর দাঁড়িয়ে বাকি কাজটা সারলেন রিশাদ, মোস্তাফিজ, তাসকিনরা।

গ্রুপ পর্বে তিন জয়ে সবার আগে শেষ আটে পৌঁছে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই জয়ে বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। দুই পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি খেলবে নেপালের বিপক্ষে।

টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা যথারীতি বিবর্ণ। ইনিংস ওপেন করতে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত খেললেন মাত্র তিন বল। আরিয়েন দত্তের বলে ফিরলেন আয়েশী রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে। করলেন এক রান। প্রথম ম্যাচে ভালো খেলা লিটন দাশ যেন দায়িত্ব শেষ করে ফেলেছেন। আরো একবার ব্যর্থ হয়ে ফিরলেন। অবশ্য দারুণ এক ক্যাচ নিয়েছেন অ্যাঙ্গেলব্রেকট। তার ব্যাট থেকেও এসেছে এক রান। ২৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর তানজিদ তামিমকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা সাকিবের। আগের দুই ম্যাচে চরম ব্যর্থ সাকিবের ব্যাট জ্বলে উঠল এই ম্যাচে। তামিমকে নিয়ে যোগ করলেন ৪৮ রান। শুরু থেকেই আগ্রাসী ভূমিকা পালন করা তানজিদ তামিম ফিরেছেন ২৬ বলে ৩৫ রান করে। আগের দুই ম্যাচের সফল ব্যাটার তাওহিদ হৃদয় পারেননি এই ম্যাচে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। টিম প্রিঙ্গলের বল জায়গা ছেড়ে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন হৃদয়। এরপর উইকেটে দুই অভিজ্ঞ সাকিব এবং মাহমুদউল্লাহ। দলের ভরসা দুজনের উপর। দুজনের মধ্যেই রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা। ৪১ রানের জুটিও গড়েন ৩২ বলে। এরই মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। ১২৫ তম ম্যাচে ১৩ তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। আর এই হাফ সেঞ্চুরিটা এমন এক সময় এসেছে যখন চারদিকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন। প্রায় ২১ ম্যাচ এবং ১৯ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরি পেলেন সাকিব। ৩৮ বলে ৭টি চারের সাহায্যে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন সাকিব। এরপরই ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। মেকেরেনকে ছক্কা মারতে গিয়ে একেবারে সীমানার কাছে অ্যাঙ্গেলব্রেকটের ক্যাচে পরিণত হন মাহমুদউল্লাহ। ফিরে আসার আগে ২১ বলে ২টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ২৫ রান করে আসেন। শেষ ১৫ বলে ২৯ রান যোগ করেন সাকিব এবং জাকের আলি। আর তাতে বাংলাদেশের ইনিংস গিয়ে দাঁড়ায় ১৫৯ রানে। সাকিব অপরাজিত থাকেন ৪৬ বলে ৬৪ রান করে। ৯টি চার মেরেছেন তিনি। ৭ বলে ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন জাকের আলি।

জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই মেরে খেলার চেষ্টা করছিলেন নেদারল্যান্ডসের দুই ওপেনার মিচেল লেভিড এবং ম্যাক্স ও দাউদ। ২২ রানের মাথায় আঘাত হানেন তাসকিন। হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ১৬ বলে ১৮ রান করা লেভিড। ১০ রান পর তানজিম সাকিবের আঘাত। ফিরতি ক্যাচে ম্যাক্স ও দাউদকে ফেরান এই পেসার। ১৬ বলে তার সংগ্রহ ১২ রান। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৬ রান করে নেদারল্যান্ডস। এরপর রানের চাকা দ্রুত ঘুরতে থাকে ডাচদের। দশম ওভারে মাহমুদউল্লাহকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক শান্ত। নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই আস্থার প্রতিদান দিলেন মাহমুদউল্লাহ। বিক্রমজিত সিংকে দারুন এক স্টাম্পিং করেন লিটন। তবে ফিরে আসার আগে ১৬ বলে ২৬ রানের ঝড় তুলে আসেন এই ব্যাটার। মেরেছেন ৩টি ছক্কা। চতুর্থ উইকেটে অ্যাঙ্গেলব্রেকট এবং অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ড চেপে বসেছিলেন। ৩১ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন দুজন। ১৫ তম ওভারে রিশাদ হোসেন আক্রমণে এসে হানেন জোড়া আঘাত। চতুর্থ বলে অ্যাঙ্গেলব্রেটকে ফেরান তানজিম সাকিবের ক্যাচে পরিণত করে। ২২ বলে ৩৩ রান করেন এই ব্যাটার। ওভারের শেষ বলে লিটনের দারুন একটি স্টাম্পিংয়ে ফিরেন বাস ডি লিডস। রানের খাতা খুলতে পারেননি লিডস। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে মোস্তাফিজ ফেরান ডাচ অধিনায়ক স্ট এডওয়ার্ডকে। জাকের আলির হাতে ক্যাচ দেন ২৩ বলে ২৫ রান করা এডওয়ার্ড। নিজের পরের ওভারে আবার রিশাদের আঘাত। এবার তার ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে মাথার উপর ক্যাচ তুলে দেন ভ্যান ভিক। সেটা লুপে নিতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি এই লেগ স্পিনারকে। পরের ব্যাটাররা কেবল হারের ব্যবধানটা কমিয়েছে মাত্র। শেষ ওভারে শেষ ওভারে দরকার ছিল ৩৩ রান। শেষ বলে আরিয়েন দত্তের উইকেটটি হারিয়ে ৭ রান নিতে সক্ষম হয় নেদারল্যন্ডস। আর তাতে ১৩৪ রানে থামে নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশ জিতে ২৫ রানে। বাংলাদেশের রিশাদ হোসেন নিয়েছেন ৩ উইকেট। ২টি নিয়েছেন তাসকিন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকায় এসি বিস্ফোরণে মহেশখালীর একই পরিবারের ২ জনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধবাস-ট্রেনে উপচেপড়া ভিড়