সুন্দর সকালটা বিকেলে বিবর্ণ

সাদমানের সেঞ্চুরিতে লিড নিল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেও শেষ সেশনটা ব্যাটারদের জন্য চরম হতাশার ছিল। প্রথমদিনের প্রথম দুই সেশনে দাপট দেখিয়েছিল জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। কিন্তু শেষ সেশনে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে। একই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল গতকাল দ্বিতীয় দিনেও। দিনের প্রথম দুই সেশন বেশ ভালোই কেটেছিল বাংলাদেশের। কিন্তু পরের দুই সেশনে ধস নামে। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। ফলে দিনের প্রথম বল থেকে দুর্দান্ত শুরু করা বাংলাদেশ দিনটা শেষ করেছে হতাশায়। সকালের সৌন্দর্যটা বিকেলে বিবর্ণ হয়ে গেল।

তারপরও সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরিতে লিড পেয়েছে বাংলাদেশ। অথচ দিনটা আরো সুন্দর হতে পারতো। হতে পারতো টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা দিন। কিন্তু দিনের দ্বিতীয় সেশন এবং শেষ সেশনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। দিনের প্রথম সেশনে কোন উইকেট না হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে হারায় তিন উইকেট। আর শেষ সেশনে হারায় আরো ৪ উইকেট। ফলে দিনটা শেষ করেছে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে।

অথচ দিনের শুরুটা কতই না আলো ঝলমলে। দিনের প্রথম বলেই জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেট নিয়ে শুরুটা দুর্দান্ত করে বাংলাদেশ। এরপর দুই ওপেনারের শতরানের জুটিতে জাগিয়ে তোলে বড় স্কোরের সম্ভাবনা। কিন্তু উইকেটে সেট হয়েও একের পর এক ব্যাটসম্যানের উইকেট ছুড়ে আসার মিছিলে মিইয়ে গেছে সেই আশা। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন সাদমান। প্রায় চার বছর একই দলের বিপক্ষে তিনি করেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১২০ রান। ১৮১ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ১৬ চার ও ১টি ছক্কা। ২২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এক ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ বাউন্ডারির রেকর্ড। আগের দিন পাঁচ উইকেট নেওয়া তাইজুল গতকাল ব্লেসিং মুজারাবানিকে ফিরিয়ে ইনিংসের সমাপ্তি টানেন। ৬০ রানে ৬ উইকেট নিয়ে থামেন বাঁহাতি এই স্পিনার।

পরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম সেশনে কোনো উইকেট পড়তে দেননি দুই ওপেনার সাদমান ও এনামুল। দুজন বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ১০৫ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যান সাদমান এবং বিজয়। তখন ৬৬ রানে অপরাজিত ছিলেন সাদমান। আর এনামুল প্রথম সেশনে করেন ৩৮ রান। দুজনের ব্যাটে ৩৩ ইনিংস ও ২৮ মাস পর উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের দেখা পায় বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ২০২২ সালে চট্টগ্রামেই শুরুর জুটিতে ১২৪ রান যোগ করেছিলেন শান্ত ও জাকির হাসান। যদিও সে জুটিকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি সাদমানএনামুল। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে ফিরেন এনামুল। মুজারাবানির বলে এলবিডব্লিউ হন এনামুল। ভাঙে ১১৯ রানের জুটি। ৩৯ রান করে ফিরেন এনামুল। ৮০ বলের ইনিংসে চারটি ৪ মারেন এই ব্যাটার।

এরপর জুটি গড়েন সাদমান ও মুমিনুল হক। এরই মধ্যে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন সাদমান। প্রায় চার বছর ও ২৬ ইনিংসের পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন এই ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেটে সাদমান এবং মোমিনুল যোগ করেন ৭৬ রান। ৩৩ রান করে মোমিনুল ফিরলে ভাঙে এ জুটি। পরের ওভারে বেনেটের বলে এলবিডব্লিউ হন সাদমান। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি তার। থামে ১৮১ বলে সাদমানের ক্যারিয়ার সেরা ১৮১ বলে ১২০ রানের ইনিংসটি। ১৬টি চার মেরেছেন এই ওপেনার। ৩ উইকেটে ২০৫ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

কিন্তু চা বিরতি থেকে ফিরেই তৃতীয় সেশনেই সব কিছু এলোমেলো করে দেন ভিনসেন্ট মাসেকেসা। আর ৮৬ রান যোগ করতে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। চা বিরতির পর বেশ ভালোই এগোচ্ছিলেন শান্ত ও মুশফিক। জিম্বাবুয়েকে ছাড়িয়ে লিডও পেয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫৪ বলে ২৩ রান করেন শান্ত। এরপর টিকতে পারেননি জাকের আলি। মাসেকেসাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৫ রান করে। তবে দিনের শেষ বেলায় বাংলাদেশের জন্য সবচাইতে বড় ধাক্কা হয়ে আসে মুশফিকের রান আউট। অযথা রান নিতে গিয়ে ফিরলেন মুশফিক ৫৯ বলে ৪০ রান করে। ৪টি চার এবং একটি ছক্কা মেরেছেন তিনি।

এরপর নাঈম হাসানকে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু মাসেকেসার লেগ স্পিনে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন নাঈম। এরপর দিনের বাকি ৪ ওভারে আর উইকেট পড়তে দেননি মিরাজ ও তাইজুল। আর তাতেই ২৯১ রানে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। হাতে আছে এখনো তিন উইকেট। আর লিড পেয়েছে স্বাগতিকরা ৬৪ রানের। চমৎকার শুরুর পর হতাশায় মোড়ানো শেষ। এখন দেখার বিষয় হাতে থাকা বাকি তিন উইকেটে লিডটা কতদূর নিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরে এলজিইডি ভবনে দুদকের অভিযান, নথি সংগ্রহ
পরবর্তী নিবন্ধআদালতে জামিন চাইতে গিয়ে গ্রেপ্তার পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আইয়ুব বাবুল