সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে তরুণদের : নওফেল

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১১ অক্টোবর, ২০২০ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

মানসিক স্বাস্থ্য সত্যিকারেই একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যা মোটেও উপেক্ষা করা যায় না। আমরা প্রায়ই শারীরিক স্বাস্থ্যের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করি। মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া কোনও স্বাস্থ্য হতে পারে না এবং স্বাস্থ্য ব্যতীত টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না। এ বছর আমাদের সকলের জীবনে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর প্রভাবের কারণে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা করতে হলে এবং মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে ব্যাপক ভিত্তিক সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচি পালন করতে হবে। কেননা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে জনস্বাস্থ্য বলতে জনসাধারণের কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যকেই বুঝায় না, বরং শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্ব বহন করে। মানসিক রোগের চিকিৎসা করার পাশাপাশি মানসিক রোগ যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্কুল-কলেজ এমনকি উচ্চ শিক্ষিত লোকদের মধ্যেও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টির কাজ করতে হবে। শারীরিক স্বাস্থ্যকে নিশ্চিত করতে হলেও চাই মানসিক সুস্থতার নিশ্চয়তা। আত্মহত্যার প্রবণতা, মাদক গ্রহণসহ নানাধরনের সামাজিক সমস্যা, সন্ত্রাস ইত্যাদি নিরসনের জন্য চাই মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে ব্যবহারিক ও কার্যকরী জ্ঞান। মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রসার ও প্রচারই পারে সমাজ থেকে নোংরা ও কুসংস্কারগুলোকে দূর করতে এবং পাশাপাশি মানসিক রোগীদের মানসিক মুক্তি ঘটাতে। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২০ উপলক্ষে নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে লাইফ কোচ বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি। ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর তানজীর আবেদিনের পরিচালনায় এবং তানজিল রশিদের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রজেক্ট ডিরেক্টর (আইডিয়া প্রজেক্ট) সৈয়দ মজিবুল হক, আরএইচএম আলাউল কবির, রিসার্চ ও ইনোভেশান স্পেশালিস্ট, টীম লিডার স্টার্টআপ বাংলাদেশ, আইসিটি মন্ত্রণালয়, ড. মনজুরে ই এলাহি, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ার পুলক কান্তি বড়ুয়া, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গৃহায়ন লিমিটেড ও এডভাইজার, লাইফ কোচ বাংলাদেশ। বক্তারা বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন এবং মানসিক রোগীদের সাথে সহনশীল আচরণ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। যেভাবে লাইফ কোচ বাংলাদেশের ব্যানারে চট্টগ্রামবাসীর মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে কাজ করে চলেছে এক ঝাঁক তরুণ। চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে লাইফ কোচের এ আয়োজনে ব্যবসায়ী সমাজকে এগিয়ে আসার আহবান জানান উপমন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আমরা সবকিছু নিয়ে চিন্তা করি। কিন্তু মনের চিন্তাটা করি না। তারও যে অসুখ হয়, তার যে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তা ভাবি না। এই সমাজে কেউ কেউ আছেন, যারা বিশাল অট্টালিকা, দামি গাড়ি, অঢেল অর্থের মালিক। শেষ বেলায় পুরো অট্টালিকা জুড়ে তারা স্বামী স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই। ছেলে বিদেশে, নাতি নাতনি বিদেশে, মেয়ে তার জামাইকে নিয়ে বিদেশে আছেন। তাহলে এত কিছু কেন করা? তাদের সব আছে কিন্তু কথা বলার লোক নাই। এত অর্থ বিত্ত নিয়ে কী লাভ হলো? যতো নগরায়ণ হচ্ছে, মানুষ, পরিবার থেকে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আমি মনে করি যে কাজটা করে মনে শান্তি আসে, সেটাই মানসিক প্রশান্তি। ইট পাথরের নগরীতে আমরা যে যার মতো ব্যস্ত। এ চাপ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। মা বাবা দুজনেই ব্যস্ত থাকলেন, সন্তান কাজের বুয়ার কাছে মানুষ হলো। সেই সন্তানের মানসিক বিকাশ কীভাবে হবে? সুস্থ সবল জাতি গঠনে সুস্থ সবল মানসিক স্বাস্থ্য গঠন জরুরি বলে মত দেন তিনি।
বিশেষ অতিথি সৈয়দ মুজিবুল হক বলেন, পোস্ট কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গেলে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি চলে আসবেই। মানসিক অসুস্থতার কারণে আমরা ডাক্তারের কাছে যাই না। তার ভয়াবহ ফলাফল আমরা পোস্ট কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে টের পাবো। এখনই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। ধাক্কাটা সামলে নিতে হবে। সরকার সবকিছু করতে পারবে না। প্রাইভেট সেক্টরকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথি আরএইচএম আলাউল কবির বলেন, অনেক শিক্ষিত মানুষও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অবহিত নন। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। শিক্ষকবৃন্দ এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে পারেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে মুয়জ্জিন, ইমাম সাহেবরা কাজ করতে পারেন। যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে চায় তাদের আমরা আইসিটি সেক্টর থেকে প্রমোট করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফখরুলের বাসায় হামলা, সরকারকে দায়ী করলো বিএনপি
পরবর্তী নিবন্ধসীমিত পরিসরে শুরু হচ্ছে সাংস্কৃতিক চর্চা