হাটহাজারীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার মিথ্যা আশা দিয়ে এক বৃদ্ধার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কামাল ও খোরশেদ নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার ভিকটিম হোসনে আরা এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের জব্বারহাট এলাকার ৩ কন্যা ও প্রতিবন্ধী ১ সন্তানের মা গৃহহীন বৃদ্ধা হোসনে আরা বেগম (৫২) বয়স্ক ভাতা ও ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার কোনো ঘর বা ভিটা না থাকায় বর্তমানে উপজেলার নাজিরহাট রেলস্টেশনের পশ্চিমে বড় চৌধুরী বাড়ির জজের ভাড়া ঘরে বসবাস করছেন। হোসনে আরার পাশের এলাকার জামাই হাটহাজারী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য খোরশেদ ভিকটিমকে জানান, হাটহাজারীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়া হচ্ছে। ওখান থেকে তাকে একটি ঘর দেওয়া হবে। পরে ভিকটিমকে নিয়ে পৌরসভার আদর্শ গ্রামের মৃত বজল আহমেদের পুত্র কামালের কাছে যান তিনি। কামালের কথামতো ভিকটিমকে খোরশেদ মিরেরহাটের পশ্চিমে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিয়ে গিয়ে ঘরগুলো দেখিয়ে ওখান থেকে একটি ঘর দেবেন বলে আশ্বাস দেন। তবে ঘর পেতে হলে ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলেও জানান তারা। অনেক দেনদরবার করে ২২ হাজার ৫শত টাকায় রাজি হন তারা। পরে ভিকটিমকে চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ে নিয়ে গিয়ে ভিকটিম এবং তার বোন ফটিকছড়ি উপজেলার পূর্ব হাসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা কামরুন্নাহারের কাছ থেকে ২২ হাজার ৫শত টাকা করে দুজনের কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা নেন। ঘরের জন্য আবেদন করার কথা বলে একটি কাগজে (স্ট্যাম্পে) স্বাক্ষরও নেন।
এদিকে টাকা দেওয়ার দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ঘর না পাওয়ায় ভিকটিম হোসনে আরা ও তার পঙ্গু সন্তান কামালের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তিনি তাদের ভয় ভীতি ও মেরে ফেলার হুমকি দেন।
হোসনে আরা বেগমের প্রতিবন্ধী ছেলে বলেন, ঘর ভিটে নেই। ঘরের আশায় সুদের উপর ধার করে টাকা নিয়ে তাদের দিয়েছি। এখন সেই টাকা সুদে–আসলে বেড়ে একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে এই টাকা শোধ করব সেই চিন্তায় চোখে ঘুম নেই। আমাদের সাথে এমন প্রতারণার উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।
অভিযুক্ত খোরশেদ বলেন, তারা আমার কাছে ঘরের জন্য আসলে আমি কামালের কাছে নিয়ে যাই। তারা কামালকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেতে টাকা দিয়েছেন বলে জানান।
অভিযুক্ত হাটহাজারী পৌরসভা শ্রমিক লীগের সভাপতি কামাল গতকাল বলেন, ঘর দেওয়ার আমি কেউ না। তবে আমি তাদের সহযোগিতা করেছি, পথ দেখিয়ে দিয়েছি। কারণ তাদের ঘর ভিটে নেই। আমি শ্রম দিয়েছি, সময় দিয়েছি, তাই কিছু খরচাপাতি, গাড়ি ভাড়া দিয়েছে। তবে ঘর দেব বলে টাকা নিয়েছি, এ অভিযোগটা মিথ্যা।
ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. জাহেদুল আলম গনমাধ্যমকে জানান, ভিকটিম অসহায়। তার একমাত্র ছেলে পঙ্গু এবং তিনটি কন্যাও আছে। পঙ্গু ভাতা, বয়স্ক ভাতা এসবে চলেন তারা। এমন মানুষের টাকাও যদি কেউ মেরে খায় তাহলে কী বলব? বিষয়টি নিয়ে আমি ফোনে একবার অভিযুক্তের সাথে আলাপ করেছিলাম। পরে ফোন করলে তিনি আর ধরেননি। এটার সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, হোসনে আরা বেগম নামের এই মহিলার দেওয়া লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।