চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালিত সুইমিং পুলটি এখন পুরোপুরি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে। যেহেতু খেলাধুলা নেই সেহেতু কেবল বাণিজ্যিক ভিত্তিতেই পরিচালিত হচ্ছে এই সুইমিংপুল। প্রতিদিন শত শত ছেলে মেয়ে সাঁতার শিখছে এই পুলে। ফলে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য যে শিডিউল করা হয়েছে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে হযবরল অবস্থা। গত কয়দিন ধরে অভিভাবকরা অভিযোগ করছেন ছেলেদের শিডিউল শেষ হতে না হতেই মেয়েরা ঢুকে পড়ছে। আর মেয়েরা বের হওয়ার আগেই ছেলেরা ঢুকে পড়ছে। বিশেষ করে শাওয়ার রুমে ঘটছে বিপর্যয়টা বেশি। ফলে ছেলে মেয়েদের প্রাইভেসি বলতে কিছু থাকছেনা বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। এছাড়া বেশ কিছু অভিভাবক অভিেযোগ করছে পাশের একটি ভবন যেটি বৈদ্যুতিক ট্রাণ্সফরমারের উপর গড়ে তোলা হয়েছে সেখান থেকে পুলে সাঁতার কাটা মেয়েদের ছুবি তোলা হচ্ছে। এমনকি ভিডিও করা হচ্ছে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। অথচ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সে বিষয়ে নেই কোন পদক্ষেপ। তাছাড়া কবে এই পুলের পানি পরিষ্কার করা হয়েছে তাও জানা নেই। ময়লাযুক্ত পানিতে চলছে সাঁতার শেখা। অথচ অভিযোগ করারও যেন কোন জায়গা নেই প্রশিক্ষণার্থী এবং অভিভাকদের। কারণ জেলা ক্রীড়া সংস্থার এখন কোন নির্বাচিত কমিটি নেই। এডহক কমিটিতে যারা আছেন তারাও আসেননা। তাই কার কাছে অভিযোগ করলে সমস্যাটা সমাধান হবে তারও যেন কোন রাস্তা খুজে পাচ্ছেনা অভিভাবকরা।
গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু অভিভাবক অভিযোগ করছেন তারা বিষয়টি নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিসে কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করতে গেলে তাদের সাথে দৃর্ব্যবহার করা হয়। যদিও সিজেকেএস এর সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমির হোসেন জানিয়েছেন সুইমিং পুলে একটি ব্যাচ নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। আর সেটি বিকেলে মেয়েদের একটি ব্যাচ। এই সমস্যাটি সহসা সমাধান হয়ে যাবে বলেও মনে করেন তিনি। এছাড়া অভিভাবকদের সাথে খারাপ ব্যবহারের মত কোন ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি। এই কর্মকর্তা জানান কিছু অভিভাবক বিশেষ করে সকালের ব্যাচে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে চান। কিন্তু তাদেরকে বিকল্প ব্যাচের কথা বললে তারা রাজি হননি। নির্ধারিত শিডিউল মোতাবেক তারা তাদের সন্তানদের সাঁতার শেখাতে চান। কিন্তু বিকল্প ব্যাচে তারা যেতে রাজি নন। সে অবস্থায় বলা হয়েছে যারা চান সমস্যাটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিতে না চাইলে তাদের অর্থ ফেরত নিয়ে যেতে পারবে। যদিও অভিভাবকদের অভিযোগটা ভিন্ন রকমের।
চট্টগ্রামের এই সুইমিংপুল তৈরির পর থেকে যতটানা সাঁতারুদের উন্নয়নে ব্যবহার হয়েছে তার চাইতে বেশি ব্যবহার হয়েছে অর্থ উপার্জনের কাজে। পুলের ধারণ ক্ষমতার চাইতেও বেশি ছাত্র ভর্তির অভিযোগ রয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে। যার ফলে শিডিউল রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে বারবার পুলে ঝামেলা হচ্ছে আর নানা অভিযোগ আসছে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে। কিন্তু সুরাহার যেন কোন ব্যবস্থা নেই। জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির যিনি সদস্য সচিব, জেলা ক্রীড়া অফিসার আবদুল বারী নতুন শিডিউলটিকে পরীক্ষামূলক বলে জানিয়েছেন। আর এজন্য তিনি পুলের কোচিং স্টাফদের দায়ি করেছেন। তিনি জানান পুলের কোচিং স্টাফরা মাসে ১৫দিন কাজ করেন আর বেতন নেন এক মাসের। যেটা আগে থেকেই চলে আসছিল। আর তিনজন কোচের পক্ষে সারাদিন কাজ করা সম্ভবনাও বলে জানান তিনি। সেজন্য নতুন শিডিউল করা হয়েছে। আজ সুইমিংপুলের এসব বিষয় নিয়ে সভায় বসার কথা রয়েছে বলেও জানান আবদুল বারী। জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে তিনি প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী নিচ্ছেন বলে যে কথা চাওর হয়েছে সে প্রসঙ্গে আবদুল বারী বলেন এটা কোন বেতন বা সম্মানী নয়। এটাকে তিনি তার যাতায়াত ভাড়া হিসেবে দেখছেন। যদিও ফেব্রুয়ারী থেকে এই যাতায়াত খরচ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখনো সে টাকা নেননি বলে জানান। তিনি জানান আমার অফিস আর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিসের দূরত্ব অনেক বেশি। আমাকে প্রায় প্রতিদিনই জেলা ক্রীড়া সংস্থায় আসতে হয়। তিনি বলেন আমি প্রতিদিনের এই গাড়ি ভাড়া কোথা থেকে দেব? তিনি বলেন আমি এরই মধ্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিসকে জানিয়ে দিয়েছি ফাইল নিয়ে যেন আমার অফিসে আসা হয়। আমি সেখানে বসে ফাইল স্বাক্ষর করে দেব। কারণ প্রতিদিন এতটাকা গাড়িভাড়া খরচ করে আসা সম্ভাবনা। দেশের অন্য কোন জেলা ক্রীড়া সদস্য সচিব গাড়ি ভাড়া নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান কয়েকটি জেলায় নিচ্ছে। যাদের অফিস স্টেডিয়াম অফিস থেকে দূরে। তার কথা মতে এটা কোন বেতন না। কেবল গাড়ি ভাড়া। যদি বেতন হয়ে থাকে তাহলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ৭০ বছরের ইতিহাসে তিনিই হবেন একমাত্র বেতনধারী সাধারণ সম্পাদক। যদিও তার বর্তমান পদবী সদস্য সচিব। এদিকে সাঁতার প্রশিক্ষণার্থী এবং অভিভাবকদের দাবি যেন নতুন শিডিউল করে বিশেষ করে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে এক ঘণ্টার সেশন শেষ করে অনেক শিক্ষার্থী শাওয়ার নিতে পারেনা। অনেকে ভেজা কাপড় নিয়ে চলে যায় বাসায়। ফলে প্রশিক্ষাণার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। তাই যতদ্রুত সম্ভব শিডিউল পরিবর্তন করে প্রশিক্ষণার্থীদের নিরাপত্তা এবং প্রাইভেসি নিশ্চিত চান অভিভাবকরা।