চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানীকে বলা হলেও এখানে স্থাপিত মান নিয়ন্ত্রণে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নেই পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগার। এছাড়া জনবল সংকটের কারণে প্রায় কাজে দীর্ঘসূত্রতার জেরে প্রতিষ্ঠানটির ‘মান’ নিয়ে সাধারণের মনে প্রশ্ন উঠেছে। আমদানি নীতিতে তালিকাভুক্ত ৭৯টি পণ্য বন্দর থেকে খালাসে বিএসটিআই থেকে আমদানিকারকদের সনদ নিতে হয়। বিএসটিআই ল্যাবে পরীক্ষার সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক পণ্যের নমুনা এখনো ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। নমুনা পাঠানো থেকে শুরু করে রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত এক সপ্তাহ সময়ক্ষেপণ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এতে ব্যবসায়ীরাও আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামে বিএসটিআই কার্যালয়ের কাজের পরিধি বাড়লেও সক্ষমতা সেভাবে বাড়েনি। বর্তমানে বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলা ছাড়াও রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন লোগো ব্যবহার করে অনেক প্রতিষ্ঠান খাদ্যপণ্য বাজারজাত করছে। এসব ক্ষেত্রে আবার ওইসব পণ্যের মোড়কে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকে না। মূলত বিএসটিআইয়ের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব পণ্যের ভোক্তারা। এছাড়া ওজন স্কেলে (বাটখারা) বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান সেটি মানছে না।
বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএসটিআইয়ের মূল তদারকির কাজ চারটি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে টেস্টিং কেমিক্যাল, টেস্টিং ফিজিক্যাল, মেট্রোলজি ও সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম)। জনবল সংকটের কারণে মাঠ পর্যায়ে বিএসটিআইয়ের মনিটরিং জোরদার করাও সম্ভব হচ্ছে না। বিএসটিআইয়ের সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) বিভাগে একজন উপ–পরিচালক, ২ জন সহকারী পরিচালক ও ৭ জন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা দিয়ে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে কাজ চালাতে হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে মেট্রোলজি বিভাগে। সেখানে একজন উপপরিচালক, ১ সহকারী পরিচালক এবং ২ জন পরিদর্শক ও ১ জন পরীক্ষক দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।
অপরদিকে টেস্টিং ফিজিক্যালে একজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক এবং সিনিয়র ২ পরীক্ষক দিয়ে চলছে কার্যক্রম। এছাড়া টেস্টিং কেমিক্যাল বিভাগে পরীক্ষক আছেন মাত্র ৫ জন। এছাড়া একজন উপপরিচালক এবং ৪ জন সহকারী পরিচালক এবং ৭ জন পরীক্ষক দিয়ে চলছে কাজ।
জানা গেছে, বিএসটিআই দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য, বৈদ্যুতিক ও প্রকৌশল পণ্য, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্যসহ মোট ২৯৯টি পণ্য নজরদারি করছে। এসব পণ্যের মধ্যে চট্টগ্রামে ল্যাবে রাসায়নিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাচ্ছে ১১২টি পণ্যের। এছাড়া ফিজিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাচ্ছে ২৪টি পণ্যের। তবে পানি, গুঁড়ো দুধের মেলামিন, ফায়ার এঙটিংগুইসারের মান, ত্বকের বিভিন্ন প্রসাধনী, ইলেকট্রিক মিটারের মান, লেখা এবং ছাপাখানার কাগজ পরীক্ষা এবং শিশু খাদ্যের পরীক্ষায়ও ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে বর্তমানে নির্মাণসামগ্রী টাইলস, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল, কলম, সস, জুস, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, পেনসিল এবং চকলেট জাতীয় পণ্যের পরীক্ষা চট্টগ্রাম ল্যাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিএসটিআইয়ের কাজের পরিধি আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে আমাদের এখানে এখনো জনবলের সংকট রয়েছে। তবে নতুন ভবনে পূর্ণাঙ্গ রাসায়নিক ল্যাব হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক যন্ত্রপাতি এসেছে। আমাদের বর্তমান ল্যাবে মেশিন বসানোর জায়গা নেই। এ বছরের শেষে নতুন ভবনে যন্ত্রপাতি স্থাপিত হবে। আশা করছি আগামী জানুয়ারির দিকে ল্যাবের কার্যক্রম শুরু হবে। তখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চট্টগ্রামে হবে। তখন ব্যবসায়ীদের আর ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। তখন বিএসটিআইয়ের কাজের গতিও বেড়ে যাবে।
বিশ্ব মান দিবস আজ : ৫৫তম বিশ্ব মান দিবস আজ। পণ্য এবং সেবার মানের বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। এ বছরের বিশ্ব মান দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বির্নিমাণে মান’। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হতে যাচ্ছে। বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে জাতীয় মান সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।