সীতাকুণ্ড উপজেলায় টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল এবং জোয়ারের পানিতে মৎস্য খামার ও ফসলি জমির সাড়ে ১৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি মৎস্য খাতে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কৃষি খাতে ৭ কোটি ১০লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি বিভাগ চট্টগ্রাম কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ–পরিচালক বরাবর পাঠানো প্রতিবেদন এবং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। তবে সরকারি হিসাবের সাথে মাঠের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে বলে কৃষকরা জানান। এতে চরম হতাশায় পড়েছেন উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৮২০ কৃষি পরিবার। মোট রোপা আউশ ৫হাজার ৩০হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫০হেক্টর। শরৎকালীন সবজি মোট ৩০৫ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫০ হেক্টর। রোপা আমনের বীজতলা ২৩৪ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮০ হেক্টর এবং রোপা আমন ৩০ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হেক্টর। টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ ৮০০ টাকা। অন্যদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সীতাকুণ্ডে মোট পুকুর রয়েছে ৬ হাজার ২০৪টি। এর মধ্যে ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০০টি। সব মিলিয়ে ২৩৪ হেক্টর পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ও মুরাদপুর ইউনিয়নে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় গ্রীষ্মকালীন শিম, ঢেড়শ, তিতা করলা, ঝিঙে ও বরবটির গাছ পচে যাচ্ছে। রোপা আমনের বীজতলার চারা এবং টমেটোর ক্ষেত একেবারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে মাঠ আবার প্রস্তুত করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা।
সৈয়দপুর ইউনিয়নের শেখের হাট এলাকার কৃষক নুরুল আবছার বলেন, তিনবার বীজতলা করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বর্ষার পানিতে ডুবে গেছে। আমাদের ফসলি জমি মনে হয় এবার পড়ে থাকবে। সৈয়দপুর ইউনিয়নের মধ্যে প্রতিবছর বর্ষায় একই চিত্র থাকে। কারণ বেশ কয়েক বছর ধরে সৈয়দপুর ইউনিয়নের উপকূল এলাকার দুটি স্লুইসগেটই পলি জমে অকেজো হয়ে রয়েছে। যার কারণে পানি প্রবাহে বাধার পড়েছে। এতে চাষের জমিতে জলাবদ্ধতা হয়ে যায়। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, স্লুইসগেট যতদিন ঠিক হবে না ততদিন এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জানা যায়, এবারে বৃষ্টির পাশাপাশি সাগরের পানির উচ্চতাও ছয় ফুটের মতো বেড়ে যায়। জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় বাঁশবাড়িয়া ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ও ফসলের মাঠে লবণাক্ত পানি ঢুকেছে। সৈয়দপুর এলাকায় ঢলের জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচার জন্য রিং বাঁধ কেটে দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে সেখানেও কৃষিজমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে পাহাড়ি ঢল।
টেরিয়াইল এলাকার কৃষক ইকবাল হোসেন জানান, তিনি ৮০ শতক জমিতে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ঢেড়শ ও গ্রীষ্মকালীন শিম লাগিয়েছিলেন। পাহাড়ি ঢলে জমে থাকা পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, উপজেলার বাঁশবাড়িয়া, বারৈয়ারঢালা, সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড ও পৌর সদরের আংশিক এলাকার কৃষিজমি পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকার কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ডুবে মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উপজেলার উত্তর অংশে পুকুরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাঁরা মাঠপর্যায়ে গিয়ে একটা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।