সারি সারি রং–বেরঙের লোহার সিঁড়ি। কোনোটা প্যাঁচানো, কোনোটা লম্বা। সীতাকুণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলে ভাটিয়ারীর মাদামবিবিরহাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে চোখে পড়বে এসব সিঁড়ির দোকান। সীতাকুণ্ডের উপকূলের বিভিন্ন জাহাজভাঙা কারখানা থেকে পুরনো স্ক্র্যাপ জাহাজের এসব সিঁড়ি সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। টেকসই হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব সিঁড়ির চাহিদা রয়েছে।
মাদামবিবিরহাটে ছোট বড় ১০টি সিঁড়ির দোকান রয়েছে। দোকানগুলো ঘুরে তিন ধরনের সিঁড়ি দেখা গেছে। প্রথম ধরনের সিঁড়ি সরাসরি জাহাজ থেকে সংগ্রহ করা, দ্বিতীয় ধরনের সিঁড়ি গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে জাহাজের লোহা ও লোহার পাত দিয়ে নতুন করে তৈরি করা হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে লোহা সংগ্রহ করে তৈরি করা সিঁড়িও বিক্রি হয় এসব দোকানে। জাহাজ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করা সিঁড়ির প্রস্থ তুলনামূলক কম। তবে দাম কিছুটা বেশি। সিঁড়ির গঠন দেখে সহজেই বোঝা যায় কোনটি জাহাজের আর কোনটি নতুন করে বানানো।
এসব সিঁড়ি কোথায় ব্যবহার হয়? জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, বসতবাড়ি, দোকান, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এসব সিঁড়ির চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে যেখানে অল্প জায়গায় দোতলা ঘর তৈরি হয় সেখানে এসব সিঁড়ি বেশি ব্যবহার হয়। মাদামবিবিরহাটে সিঁড়ি বিক্রির দুটি বড় প্রতিষ্ঠান নূর স্টিল ও জেএ এন্টারপ্রাইজ। এসব দোকানের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল কীভাবে তারা সিঁড়ি সংগ্রহ করেন এবং কিসের ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হয়।
নূর স্টিলের মালিক মো. হারেছ বলেন, কোনো জাহাজ ভাঙার জন্য উপকূলে আনার পর তারা নিলামে কেজি বা বর্গফুট হিসেবে সিঁড়িগুলো কিনে নেন। আবার অনেক সময় অন্য ঠিকাদার থেকে দ্বিতীয় দফায়ও কিছু সিঁড়ি কেনেন। মরিচাহীন ভালো সিঁড়িগুলো আলাদা করে রেখে দেন বিক্রির জন্য। এগুলো প্রতি ফুট ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তারা। কিছুটা জং ধরা সিঁড়িগুলো মেরামত করেন। চাহিদা অনুসারে নতুন সিঁড়ি বানিয়েও দেন। বেশিরভাগ মানুষ বর্গফুট হিসেবে সিঁড়ি কেনেন বলে জানান তিনি।
জেএ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ বলেন, জাহাজের পুরনো সিঁড়ি কেটে কিংবা পুরনো জাহাজের স্ক্র্যাপ লোহা দিয়ে নতুন করে বানিয়ে দেওয়া সিঁড়ি প্রতি ফুট ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়। স্থানীয় লোহা দিয়ে তৈরি করা সিঁড়ি প্রতি ফুট ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।