মোবাইল ফোন আছে কিন্তু সিম কার্ড নেই এমনটি কেউ নিশ্চয়ই চান না। সিম কার্ড ছাড়া মোবাইল ফোন আর খেলনা মোবাইল ফোনের মধ্যে খুব বেশি একটা পার্থক্য নেই। সিম কার্ডের কাজ হচ্ছে নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তার গ্রাহকের পরিচিতি নিশ্চিত করা। SIM-এর সম্পূর্ণ ইংরেজি হলো সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে যখন জিএসএম প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটে তখন একটি সিম কার্ড ছিল বর্তমান ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের সমান। এরপর ১৯৯৬ সালে মিনি সিমকার্ড, তারপর ২০০৩ সালে মাইক্রো সিম কার্ড এরপর ২০১২ সালে ন্যানো সিম কার্ড আর এখন তো সিম কার্ডই নাই ভার্চুয়াল সিম কার্ড যাকে ই-সিম কার্ড বলা হচ্ছে।
প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশের ফলে খুবই অল্প সময়ে এর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। অন্যদেশের মতো আমাদের বাংলাদেশও ই-সিমের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। খুব শ্রীঘ্রই গ্রামীণফোন তাদের ই-সিমের সেবা চালু করতে যাচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকের মনে কৌতুহল ও নানা প্রশ্ন। ই-সিমের (ESIM) পূর্ণ রুপ হচ্ছে এম্বেডেড সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল। এটি কাজ করে মোবাইল ফোনের সফটওয়্যারের সাথে। ই-সিম সমর্থন করে এমন মোবাইল ফোনগুলোর মাদারবোর্ড চিপসেট এমনভাবে প্রোগ্রাম করা যেখানে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল সিম বা ই-সিম স্থাপন করা যায় এবং যেটি কাজ করবে একটি স্বাভাবিক সিম কার্ডের মতোই। এটি ইন্সটল করাও খুব সহজ। অপারেটর থেকে দেওয়া কিউআর কোডটি স্ক্যান করে তাদের দেওয়া প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করলেই আপনার মোবাইল ফোনে একটি ই-সিম কার্ড ইন্সটল হয়ে যাবে। ব্যাপারটি অনেকটা আমরা যখন প্রথমবার মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ডাটা প্যাক একটিভ করি তখন অপারেটর থেকে যে একটি কনফিগারেশন এসএমএস পাঠানো হয় যা সেভ করলে মোবাইল ফোনের সেটিংয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইন্টারনেট প্রোফাইল কনফিগার হয়ে যায় এখানেও অনেকটা এইরকমই হয়।
প্রত্যেকটি প্রযুক্তির সুবিধা-অসুবিধা দু’টিই আছে। ই-সিমের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। ই-সিমের বড় সুবিধা হলো এটি মোবাইল ফোন সেটের সাথে সফটওয়্যারের মাধ্যমে যুক্ত থাকে বলে সিম খোলা বা লাগানোর প্রয়োজন নাই। এক্ষেত্রে মোবাইল ফোন চুরি হয়ে গেলে চোর সিম কার্ড খুলে ফেলতে পারবে না, মোবাইল ফোনটি অন করলেই তার লোকেশন ট্র্যাক করতে সুবিধা হবে। একটি মোবাইল ফোন সেটে অনেকগুলো ই-সিম ব্যবহার করা যায়। আমার জানা মতে ৫টির মতো। সিম হারানো বা নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। আইওটি ডিভাইসের ক্ষেত্রে ই-সিম খুবই সুবিধাজনক। ই-সিম ব্যবহারে মোবাইল ফোনে বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যেতে পারে কারণ এ ধরনের প্রযুক্তির ডিভাইসের ক্ষেত্রে সার্কিটের সাইজ ছোট হবে ফলে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে।
অসুবিধাগুলো হলো কোনো কারণে আপনার মোবাইল ফোন সেটটি নষ্ট হয়ে গেলে বা অন না হলে আপনি সিম অন্য ফোনে লাগিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন না। সিমে থাকা নম্বর ও এসএমএসও উদ্ধার করতে পারবেন না। (অবশ্য ক্লাউড ব্যাকআপ থাকলে ভিন্ন কথা)। মোবাইল ফোনটি যদি কোনো কারণে রিসেট করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে ই-সিমের কনফিগারেশন আবার নতুন করে করতে হবে। সিম কার্ড পরিবর্তন করে অন্য নেটওয়ার্কে যাওয়া একটু কষ্টকর হবে। আর হ্যাকিং ঝুঁকি তো কিছুটা আছেই।
আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে বেশ কয়েক বছর ধরে ই-সিম সেবা চালু আছে। অনলাইনে ই-সিম ভেরিফিকেশন কোডের কারণে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল ব্যাবহার করে ই-সিম হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি। প্রযুক্তির সাথে পরিবর্তন বাঞ্চনীয়। বর্তমানে শুধু দামী ফোনগুলোতেই যেমন আইফোন ১১, ১২-এর অনেকগুলো ভার্সন, গুগল পিক্সেল, গ্যালাক্সি এস সিরিজ, মটোরেজার সহ অনেকগুলো ফোন ই-সিম সমর্থন করে।
আশা করি ভবিষ্যতে লো বাজেটের ফোনগুলোতেও এই ফিচার যুক্ত হবে।
লেখক: কম্পিউটার হ্যাকিং ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর