করোনার কারণে সব সেক্টরই মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে আছে দেশের চলচ্চিত্র ও সিনেমা হল। সিনেমা হলে নাজুক পরিবেশ, মান সম্মত কন্টেন্টের অভাব, সময় উপযোগী সিনেমা নির্মাণে অক্ষমতা, স্যাটেলাইট ও অনলাইন প্লাটফরমের আধিক্য – এরকম আরো অসংখ্য কারণে হলবিমুখ দর্শক। করোনার আগে স্বাভাবিক অবস্থাতেও চলচ্চিত্রে খুব একটা জৌলুস ছিলো না। বরং মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। এরই মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক বিবেচনা করে সরকারি নির্দেশে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সিনেমা হলগুলো ১৬ অক্টোবর শুক্রবার থেকে চালু হয়েছে। তবে দর্শক উপস্থিতি হতাশাজনক।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হল পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস ও সুগন্ধা সিনেমা হলের কর্ণধার আবুল হোসেন। প্রথম দিন নতুন ছবি ‘সাহসী হিরো আলম’ মুক্তি দেয়া হয়েছে সিনেমা প্যালেসে। করোনার পর চট্টগ্রামে এই একটি মাত্র হলই খোলা হয়েছে। তিনি গতকাল আজাদীকে জানান, শুক্রবার শুরুর দিন সিনেমা প্যালেসে দর্শক উপস্থিতি মোটামুটি ভালোই ছিল। কিন্তু এর পর থেকে প্রতিটি শো’তে দর্শক উপস্থিতি ২০/২২ জনের বেশি হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একেতো নতুন ছবি মুক্তি নেই, তার উপর নতুন নায়ককে দর্শক গ্রহণ করছে না। এ কারণে দর্শক উপস্থিতি হতাশা জনক। প্রতিদিন চারটা শো চলে। বেলা সাড়ে বারোটা, বিকেল সাড়ে তিনটা, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা এবং রাত নয়টা। দর্শক না থাকায় রাত নয়টার শো আমরা বন্ধ রেখেছি। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে, হলে মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এদিকে আবুল হোসেনের কাজীর দেউড়ি মোড়ের ‘সুগন্ধা’ সিনেমা হল (পূর্বে এটার নাম ছিল ‘ঝুমুর’। পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর গত ২৭ জানুয়ারি চালু হয়েছিল ‘সুগন্ধা’ নামে) এখনও চালুই হয়নি টেকনিশিয়ানের অভাবে। এ কথা আবুল হোসেন নিজেই জানান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। যারা কাজ করতেন তারাও বাড়ি চলে গেছেন। ছবি চালানোর টেকনিক্যাল কাজগুলো যারা করেন তারাও বাড়িতে চলে গেছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। বুঝিয়ে রাজি করাচ্ছি আসার জন্য। আগামী শুক্রবার থেকে ইচ্ছে আছে হলটি চালু করার।
এছাড়া চট্টেশ্বরী রোডে ‘আলমাস’ ও ‘দিনার’ সিনেমা হল এখনও চালু হয়নি অভ্যন্তরীণ বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে।
নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে চট্টগ্রামের সিনেমা হলগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে আবুল হোসেন বলেন, যে কয়টি আছে সেগুলো রক্ষায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। তিনি বলেন, ছবি প্রদর্শন করতে এবং হল চালাতে গিয়ে বিপুল বিদ্যুৎ খরচ হয়। সরকার এদিকে আমাদের ছাড় দিতে পারে। বিদ্যুৎ বিলটা কমার্শিয়ালি না নেয়ার অনুরোধ রইলো।
প্রসঙ্গত: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে দেশের অন্যসব বিনোদন কেন্দ্র ও সিনেমা হলের মত চট্টগ্রামের চারটি হলও গত ১৮ মার্চ বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় একই সময়ে বন্ধ হওয়া চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের শ্যূটিং শুরু হয় এক মাস আগে। এদিকে গত ১৪ অক্টোবর বুধবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে সিনেমা হল খোলার অনুমতি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ এর বর্তমান পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ ও সিনেমা হলের আসন সংখ্যার কমপক্ষে অর্ধেক আসন খালি রাখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে সারা দেশের সিনেমা হলসমূহে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হলো’।