সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক

বন্দরের ট্যারিফ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৫ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর গেজেট প্রকাশের আগে গতকাল বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠকে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) . সাখাওয়াত হোসেন ট্যারিফের হার পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। ব্যবহারকারীরা দশ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকটিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সদস্য (ফিন্যান্স) ছাড়াও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এঙপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতরাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, বৈঠকে অংশ নেয়া বন্দর ব্যবহারকারীদের প্রায় সকলেই একযোগে বলেছি যে, এভাবে একসাথে এত বেশি মাশুল বাড়ানো যাবে না। এতে দেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের প্রচুর টাকা বাইরে চলে যাবে।

তিনি বলেন, বৈঠকে আমরা বলেছিআমি পোর্ট উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসেবে দেখেছি যে বন্দর কখনো লসে ছিল না। বন্দর একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। তারপরও বন্দর লাভ করছে। এখন বন্দরের বিভিন্ন সেবার বিপরীতে মাশুল বাড়ানোর একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। বন্দরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ১৯৮৬ সালের পর ট্যারিফ বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালে মাত্র ৫টি খাতে মাশুল বাড়ানো হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর মাশুল না বাড়ালে তাদের চলছে না।

কিন্তু আমরা এই কথার প্রতিবাদ করে বলেছি, বন্দর মাশুল না বাড়ালেও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে মাশুল বেড়ে গেছে। ১৯৮৬ সালে ডলার ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। এখন ডলার ১২২ টাকা। বন্দর যেহেতু ডলারে পেমেন্ট নেয়, তাই মাশুল না বাড়লেও ডলারের কারণে তাদের আয় ঠিকই বেড়েছে।

তিনি বলেন, বন্দরের কার্যক্রম বহুগুণে বেড়েছে। ১৯৮৬ সালে বন্দরের কার্যক্রম যা ছিল তার তুলনায় এখন শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কার্যক্রম বাড়ার সাথে সাথে বন্দরের আয়ও বেড়েছে। বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মাশুল বাড়ানো হলে এই টাকা শিপিং এজেন্টেরা আমাদের কাছ থেকে আদায় করবে। জাহাজের মালিকেরা সেই টাকা আমাদের কাছ থেকেই নিয়ে যাবে। যা মূলতঃ বিদেশে চলে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমরা সবাই বলেছি যে, এক সাথে ৪০ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ালে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি বাড়াতেই হয় তাহলে তা যেনো গড়ে ১০ শতাংশের বেশি না হয় আমরা সেই অনুরোধ করেছি।

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বৈঠকের আলোচনার ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা উপদেষ্টা সাহেবকে দায়িত্ব দিয়েছি। বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘আজকের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সবাই বলেছেন, ১০ শতাংশের বেশি মাশুল যাতে বাড়ানো না হয়। তিনি বলেন, ব্যবসা এবং ব্যবসায়ীদের ঝুঁকির মধ্যে রাখা হলে রপ্তানি এগিয়ে যাবে না। এমনিতে অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি করেন। গত দুয়েক বছরে অত্যধিকভাবে ডলারের দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে বন্দরের সব ধরনের সেবার মাশুলের পরিমাণও বেড়েছে। এখন আবারও বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীরা নতুন করে আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন।’

সূত্র বলেছে, সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, আজকের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হলেও আগামী ৫ সেপ্টেম্বর আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ট্যারিফ বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। বন্দরের বিভিন্ন সেবাখাতের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, ওই খাতে যে পরিমান টাকা খরচ হয় তাই উঠেনা। ব্যবহারকারীরা একইসাথে ট্যারিফ না বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর কথা বলেছে। তবে তা যেনো ১০ শতাংশের বেশি না হয় তাও অনুরোধ জানিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাবে গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের আপত্তির মুখে ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাবটি আবার পর্যালোচনার জন্যে সোমবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত নতুন মাশুল গত ২৪ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে প্রস্তাবটি গেজেট আকারে প্রকাশের পর্যায়ে রয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ খোঁজার প্রতিশ্রুতি ১১ পশ্চিমা দেশের
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৫