সিদ্দিক আহমেদ (১৯৪৬–২০১৭)। সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। তাঁর জন্ম ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ শে জুলাই চট্টগ্রামের রাউজান থানাধীন গশ্চি গ্রামে। বাবা খলিলুর রহমান মাতব্বর আর মা গুলচেহের। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠা সিদ্দিক আহমেদের ছোটবেলা থেকেই গভীর ঝোঁক ছিলো সৃজন ও মননশীল কাজের প্রতি। সর্বমহলে সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত হলেও গ্রামে তিনি সিদ্দিক মাস্টার নামেই সমধিক পরিচিত। গশ্চি প্রাইমারি স্কুলেই তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু। ওখান থেকে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হন নোয়াপাড়া স্কুলে। মেট্রিকুলেশান করেন ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর চট্টগ্রাম সিটি কলেজে নৈশ শাখায় ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে যোগ দেন। ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে চলে যান গ্রামে। সম্পৃক্ত হন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে। ৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আমিন জুট মিলে চাকরি নেন। পরে কৃষক কনফারেন্সে যোগদান করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার খিলগাঁও স্কুলে ক্লার্ক কাম টিচার পদে যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ‘একতা’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ের ৫ তারিখ পর্যন্ত তিনি সেখানে কর্মরত ছিলেন। এরপর গ্রামে ফিরে এসেই গশ্চি হাই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ৭৯ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে তিনি স্কুলের এ চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। এবং গ্রামে ‘গশ্চি শিশুবাগ’ নামে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে সহ–সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক আজাদী পত্রিকায়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটানা দীর্ঘ পঁচিশ বছর নিজেকে নিয়োজিত রাখেন সাংবাদিকতা পেশায়। অবসর গ্রহণ করেন সহকারী সম্পাদক হিসেবে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনে সাহিত্য চর্চা করেছেন গৌরবের সাথে। বিশ্ব সাহিত্য চর্চায় ছিলেন তিনি সকলের অগ্রগামী। অনুবাদের মধ্য দিয়ে সহজ করে দিয়েছেন বিশ্ব সাহিত্যের পাঠ। রচনা করেছেন নয়টি গ্রন্থ। পেয়েছেন অনেকগুলো সম্মাননা, পুরস্কার।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ হচ্ছে : কবিতা : জল ও তৃষ্ণা, অনুবাদ কবিতা : আপেলে কামড়ের দাগ, জীবনীমূলক বই : কিছু মানবফুল, চিত্রকলা : পিকাশো, প্রবন্ধ–নিবন্ধ: কবিতার রাজনীতি, খোলা জানালায় গোপন সুন্দরবন, পৃষ্ঠা ও পাতা, গদ্য : ছিটেফোঁটা। তিনি তাঁর কর্মে স্বীকৃতিস্বরূপ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একুশে পদক, উদীচী, দুর্নিবার, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ও মোহাম্মদ খালেদ ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব থেকে সম্মাননা পান। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।