চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় ফিডার রোড-২ নির্মাণে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছয় সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সদস্যরা তিনটি প্রস্তাবনা সামনে রেখে কাজ করবে। গতকাল সিডিএর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় গঠিত টেকনিক্যাল কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। নগরের সঙ্গে বেড়িবাঁধের সংযোগ স্থাপনে আউটার রিং রোডের প্রকল্পে তিনটি ফিডার রোড নির্মাণ অর্ন্তভুক্ত আছে। এর মধ্যে বড়পোল-আনন্দবাজার-বেড়িবাঁধ পর্যন্ত হচ্ছে ফিডার রোড-২। মাস দুয়েকের মধ্যে আউটার রিং রোড প্রকল্প-২ এর উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে সিডিএ। সেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ফিডার রোড।
তবে শুরু থেকেই ফিডার রোড-২ নির্মাণে বিরোধিতা করে আসছে ওয়াসা। সংস্থাটির দাবি, স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মধ্যম হালিশহরে ১৯৬৩ সালে ১৬৩ দশমিক ৮৫৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করেছে ওয়াসা। ফিডার রোডটির চৌচালা থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত অংশ পড়েছে ওয়াসার অধিগ্রহণকৃত ভূমির ওপরই। আরএস জরিপ অনুযায়ী এ ভূমিতে কোনো সড়ক নেই। বিএস জরিপে মানুষের হাঁটাচলার জন্য রাস্তা আছে। তবে তা অধিগ্রহণকৃত জমির পশ্চিম প্রান্তের সীমানা রেখা হতে প্রায় ৩০০ ফুট অভ্যন্তরে শেষ হয়ে যায়। ইতোমধ্যে অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের লে-আউট তৈরি করা হয়েছে এবং এতে আড়াআড়িভাবে ভূমির মধ্যখানে কোনো ধরনের সড়ক রাখা হয়নি। তবে সিডিএর দাবি, মাস্টার প্ল্যানে, ১০০ ফুট প্রস্তের একটি সড়ক নির্মাণের কথা উল্লেখ আছে। এটাই হবে ফিডার রোড-২। তাছাড়া এটি করা না হলে আউটার রিং রোডের সুফল পাবে না নগরবাসী। অবশ্য স্থানীয়রাও ফিডার রোডের পক্ষে।
অত:পর টেকনিক্যাল কমিটি : আগেই ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে দাবিতে ওয়াসা তাদের স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য কোনো ছাড়পত্র বা এনওসি নেয়নি সিডিএ থেকে। অথচ আইন অনুযায়ী, ছাড়পত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। সর্বশেষ দাতা সংস্থার চাপে পড়ে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের শর্তের কারণে কিছুদিন আগে ছাড়পত্রের আবেদন করে ওয়াসা। এবার ফিডার রোডের কারণে আপত্তি জানায় সিডিএ। তবে ওয়াসাও ছাড় দিতে নারাজ। বিষয়টি সমাধানে একাধিকবার দুই সংস্থার মধ্যে চিঠি চালাচালিও হয়েছে। কিন্তু সমাধান হয়নি। সর্বশেষ গতকাল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, সিএমপি ও বন্দরের প্রধানদের উপস্থিতিতে সমন্বয় সভা হয়েছে।
সভায় ছয় সংস্থার সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে দেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। টেকনিক্যাল কমিটিতে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রধান প্রকৌশলী এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী, সিএমপির ডিসি ট্রাফিক এবং সিডিএর আউার রিং রোড প্রকল্প ও ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, সিএমপির অতিরিক্ত অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথসহ সিডিএ ও ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিটি মেয়র আউটার রিং রোডের সুফল পাওয়া এবং জনস্বার্থে ফিডার রোড নির্মাণের উপর জোর দেন। তার ভাষায়, রাস্তা আগে।
সিডি চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আগ্রাবাদ-বড়পুল থেকে সহজে পতেঙ্গা এবং বিমান বন্দর যাওয়ার জন্য সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চৌচালা থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কটি মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আমরা ১০০ ফুট সংরক্ষণ করছি। বেড়িবাঁধ দিয়ে চলাচলের জন্য এটি একমাত্র জায়গা।
যেসব বিষয়ে কাজ করবে কমিটি : ফিডার রোড-২ নির্মাণে তিনটি বিকল্প প্রস্তাবনা আসে গতকালকের সভায়। টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন। প্রস্তবানাগুলো হচ্ছে- স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ওপর দিয়ে ফ্লাইভার বা ওভার পাস করা অথবা স্যুয়ারেজ প্রকল্পের বামদিক দিয়ে ফিডার রোডটি বেড়িবাঁধের সাথে যুক্ত করা। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড় উত্তর দিকে সরিয়ে বিদ্যমান জায়গা ওয়াসাকে বুঝিয়ে দেয়ারও প্রস্তাব আসে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম। তিনি আজাদীকে বলেন, সভায় যেসব প্রস্তাবনাগুলো এসেছে সেগুলো গঠিত কমিটি খতিয়ে দেখবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ওই ভূমিতে ওয়াসা আরো দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে কনজাস্ট হয়ে যাবে। তাই উত্তর দিকে গেলে সমস্যা হবে না বলে প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। সেখানে সিডিএ থেকেও প্রস্তাব এসেছে। সবগুলো বিবেচনা করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে বলেন, ফিডার রোড-২ করতে হবে। কিন্তু ওয়াসা কোনোভাবে করতে দিচ্ছিল না। এটা প্রাইমারি সড়ক। করতেই হবে। এখন সমন্বয় করে করব।
এ প্রকৌশলী বলেন, আইন অনুযায়ী, চট্টগ্রামে যতগুলো সংস্থা আছে প্রকল্প বাস্তাবায়ন করার ক্ষেত্রে সিডিএ থেকে তাদের এনওসি নিতে হবে। কিন্তু স্যুয়ারেজ প্রকল্প করার জন্য ওয়াসা নেয়নি। এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য ছিল অনেক আগেই তারা জায়গা অধিগ্রহণ করেছে। সর্বশেষ ওয়াসার প্রকল্পে অর্থ সহায়তার ক্ষেত্রে দাতা সংস্থা শর্ত দিয়েছে পরিবেশ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। আবার পবিবেশের শর্ত আছে সিডিএ থেকে এনওসি নিতে হবে। ফলে বাধ্য হয়ে ওয়াসা আমাদের কাছে আসে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে জাইকার স্টাডিতে দেখা গেছে, বিমানবন্দর পর্যন্ত বিদ্যমান সড়কে দৈনিক ৭৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে। বিকল্প সড়ক আউটার রিং রোড হলে ৪৫ শতাংশ গাড়ি সেদিকে চলাচল করছে। এখন তো সেটা দুই-আড়াই লাখ হয়ে গেছে। যখন গবেষণা হয়েছিল তখন টানেল, মীরসরাই ইকনমিক জোন এবং বে-টার্মিনাল ছিল না। সেগুলো যুক্ত হলে আগামীতে ৫০ লক্ষে পৌঁছবে। এসব গাড়ি চলাচলের যথেষ্ট অবকাঠামো তো আমাদের নেই। ওই প্রেক্ষাপট থেকে আমরা বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত রিং রোড করছি। এখন ফিডার রোড না করলে তো সুফল পাওয়া যাবে না।