দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ শেষে চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন তিনি। এর আগে বিকালে লালদীঘি চসিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে চসিকের কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ‘অত্যন্ত সততার সাথে এবং দুর্নীতিমুক্ত থেকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে কাজ করার’ নির্দেশনাদেন। এ সময় চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ এবং রাজস্ব শাখার কর্মচারীদের সতর্ক করেন।
মেয়র চসিককে স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। বলেন, দেনাসহ বিভিন্ন সমস্যা আছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছি। আমি হাঁটব, কোনো সমস্যা নাই। আমি সময় দিব। সিটি কর্পোরেশনকে আমি একটা পরিবর্তনের জায়গায় নিয়ে আসতে চাই।
এ মুহূর্তে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়ে ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল’ গঠনের ঘোষণা দেন। বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, যখনই কোনো ইর্মাজেন্সি আসে সেটার ওপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এখন জরুরি হচ্ছে ডেঙ্গু এবং ক্লিনিং অ্যাকটিভিটিস। এছাড়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ধার, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খেলার মাঠ গড়ে তোলা, মেমন হাসপাতালের গৌরব পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দেন। চসিকে কোনো রাজনীতি করবেন না বলেও জানান তিনি। মেয়র নগরের সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে নগর সরকার প্রতিষ্ঠায় জোর দেন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করা এবং মানুষের উপকারে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণে নগর পরিকল্পনাবিদ, পেশাজীবী, প্রাক্তন মেয়র, বুদ্ধিজীবীর পরামর্শ নেবেন বলে জানান তিনি। মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
হবে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টার : ডা. শাহাদাত বলেন, আমাদের এখন সমস্যা হচ্ছে ডেঙ্গু রোগ। সেটা প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পাশাপাশি সমস্ত নাগরিককে সচেতন করার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিসহ মশা নিধন করা হবে। লার্ভিসাইড স্প্রে করা হয় তার কোয়ালিটি একটু টেস্ট করতে চাই। এমন কোনো স্প্রে আমি চাই না যে স্প্রে দিলে মশা লাফ দিয়ে উঠে যাবে। মশা মরছে কিনা সেটা দেখতে হবে। মশা না মরলে এই ধরনের ওষুধ কিন্তু আমি গ্রহণ করব না।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টার এবং একটা হটলাইন হবে। যেকোনো জায়গায় কোনো ডেঙ্গু রোগী যদি থাকে, কোনো সমস্যায় যদি পড়ে, তিনি হটলাইনে কল করবে। আমরা যারা ডাক্তার আছি তারা কাউন্সেলিং করব। যদি কোনো জায়গায় ফগিং স্প্রে না হয় আমাদের সেখানে সরাসরি যেতে হবে। কেউ যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যায়, পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার পর যদি বুঝতে পারি যে তার বাজে অবস্থা, হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে, তা ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টারের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, আরেকটি জিনিস চিন্তা করছি, ৪১ ওয়ার্ডে অভিযান চালাব। সেখানে যে সচিবরা রয়েছেন তাদের উদ্যোগে সেখানে ডেঙ্গু হেল্প ম্যানেজমেন্ট সেন্টার থাকবে। আমাদের কার্যালয়ে এসে তারা কথা বলবে, সেখান থেকে সিরিয়াস রোগীগুলো আমরা সুনির্দিষ্ট হাসপাতালের মাধ্যমে সেবার ব্যবস্থা করব।
কর্মচারীদের হঁশিয়ারি : মাঠে উপস্থিত হয়ে পরিচ্ছন্নকর্মীদের না পেলে কঠোর ব্যবস্থার নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন মেয়র। বলেন, আমি এসি রুমে বসে থাকার লোক নই। আমি অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে ৪১ ওয়ার্ডে প্রোগ্রাম দেব। আমি নিজেই স্পটে যাব। আমি কিন্তু সকালে এক–আধ ঘণ্টা অফিস করব, এরপর বেরিয়ে যাব। একেকদিন একেক ওয়ার্ডে পরিদর্শন করব। আমার সাথে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন অভিযানের লোকজন এবং ডেঙ্গু সেল নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা থাকবেন। আমি প্রতিটা ওয়ার্ডে ঘুরব এবং পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম নিজে প্রত্যক্ষ করব। পরিচ্ছন্ন বিভাগে প্রায় দুই হাজার কর্মচারী পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত। আমি প্রতিটা ওয়ার্ডে গিয়ে স্বশরীরে তাদের দেখতে চাই। আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি, যদি কাউকে আমি না দেখি তাদের চাকরি হয়তোবা নাও থাকতে পারে। আমাকে অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে কাজের প্রতি সিনসিয়ারিটি এবং কাজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয় একজন সদালাপী, অত্যন্ত কর্মঠ লোক। আমি দেখেছি, রাত ১০টায়ও তিনি অফিস করেন, যদিও সেখানে ৫টা পর্যন্ত থাকার কথা। ৮৫ বছরের বয়স্ক একজন লোক দিন–রাত কষ্ট করে যাচ্ছেন এবং রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন। গতকালও রাত ৮টা পর্যন্ত আমাদের সাথে ডেঙ্গু নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছেন। এত বয়সে যদি একজন লোক যদি কষ্ট করতে পারে, আমরা কম বয়সে কেন কাজ করতে পারব না?
তিনি বলেন, আমি সবাইকে বলছি, প্লিজ দেশটাকে ভালোবাসুন। দেশের প্রতি মমত্ববোধ এবং দেশের প্রতি যদি আপনার ভালোবাসা এবং সততা না থাকে আপনি নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন না।
শাহাদাত বলেন, প্রথমে আমার নিজকে দিয়ে সংস্কার করতে হবে। নিজের আত্মশুদ্ধি দিয়ে শুরু করতে হবে। তাহলে দেখবেন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে। আমরা করতে পারি, আমরা জানি, বাঙালিরা আসলে কর্মঠ এবং আমরা কাজ করতে জানি। আসলে হয়েছি কি, আমরা একটা সিস্টেমের মধ্যে পড়ে গেছি; যার কারণে আমরা আজকে করতে পারছি না।
গৃহকর বৃদ্ধি করেছে আওয়ামী লীগ : গৃহকর আদায়কারীদের সতর্ক করে মেয়র বলেন, আমি কিন্তু অনেক কিছু জানি। যেহেতু আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, আমার নিজের হসপিটাল আছে, আমার নিজের বাড়ি আছে। সেখানে কি ঘটনা হয় তার সবকিছু আমি জানি। কাজেই আপনারা সাবধান হয়ে যান। আমি কিন্তু বলছি সাবধান হয়ে যেতে হবে সবাইকে।
তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাঙ বাড়ানোর দরকার নেই। যে হোল্ডিং ট্যাঙ আমরা আগে দিয়ে আসছি, সেই হোল্ডিং ট্যাঙ যদি আমরা ঠিকমতো পাই, ইনশাআল্লাহ চসিকে বেতন দেওয়ার জন্য আর কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।
তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাঙগুলো আমরা নিতে পারছি না বিভিন্ন কারণে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হোল্ডিং ট্যাঙ বেড়েছে। ওটার জন্য আপিল করতে করতে আগের যে যে ট্যাঙ ছিল সেটাও দিচ্ছেন না। ৩০–৪০ শতাংশ দিচ্ছেন না। আমার মনে হয়, একটা জায়গায় এসে আমাদের এটা শেষ করতে হবে। বারবার বলছি, হোল্ডিং ট্যাঙ বাড়ানোর দরকার নেই। যেটা দিচ্ছেন সেটা ঠিকভাবে দিতে হবে। মাঝখানে একটা গ্রুপ সেখানে গিয়ে কিছু টাকা নিয়ে কমিয়ে দেওয়ার কথা বলে এদিক–ওদিক করে। সিটি কর্পোরেশনকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাবেন না।
তিনি বলেন, আপনারা বেতন পাচ্ছেন সবাই। মনে করি, আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবেন। আপনারা অনেকে হয়তো বছরে দুইবার বোনাস পান না। আমরা ইনশাআল্লাহ সেটাও করব, যদি কর্পোরেশন স্বাবলম্বী হয়। ওইদিকে আপনারা চিন্তা করেন। আমার অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে।
উদ্ধার হবে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় : প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ধারের ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের টাকা দিয়ে করা। আজকে সেটা বেদখল হয়ে গেছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উদ্ধার করব ইনশাআল্লাহ। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, সেটা আমি করব। তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, আমরা মুখে শুধু বড় বড় কথা বলি। যখন ক্ষমতা চলে যায় তখন আমাদের ঘরে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। মানুষের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আমরা নিজের নামে করে ফেলি। এটাই হচ্ছে আমাদের বড় রোগ। এ জায়গা থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে।
মেয়র বলেন, বছরে প্রায় ৫২ কোটি টাকা কর্পোরেশনকে ভর্তুকি দিতে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গত ১৬ বছরে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হবে। নৈতিক শিক্ষায় সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষকরা এ বিষয়ে জোর দেবেন।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনটা হয়েছে মেধার যে বৈষম্য হয় তার প্রতিবাদে। আমি মেধাবী, আমি চান্স পাচ্ছি না, আর একটা অমেধাবী রাজনৈতিক কারণে চান্স পেয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই কিন্তু আজকে এই যুদ্ধটা হয়েছে। কাজেই এটা আমাদেরকে মনে রাখতে হবে। আমাদেরকে একটা মেধাবী জাতি তৈরি করতে হবে।
৪১ ওয়ার্ডে খেলার মাঠ : নগরের ৪১ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে খেলার মাঠ করার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে শাহাদাত বলেন, শহরে খেলার মাঠ নেই। আজকে যে টার্ফ তৈরি হয়েছে সেখানে একটা শ্রেণি তাদের বাচ্চাদের খেলতে দিতে পারছে না। এটা সমাজের মধ্যে একটা বৈষম্য তৈরি করছে। নিম্নবিত্ত বা গরিব বাচ্চারা সেখানে খেলতে পারছে না। এতে তাদের মনে যে সাইকোলজিক্যাল ডেমারেজ হয়ে যাচ্ছে এ কথাটা কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না। এই বিষয়গুলোতে আমাদের মানবিক হতে হবে। এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমি অবশ্যই এদিক দিয়ে নজর দিব।
তিনি বলেন, আজকে আমরা এই ছোট্ট একটা মোবাইলের মধ্যে আমাদের চোখ চলে গেছে। সারাক্ষণ সেখানে আমরা দুই চোখ দিয়ে রাখছি। এইটার কারণে আমাদের চোখ–কান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নার্ভের সমস্যা হচ্ছে, বাচ্চাগুলো এককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। সোসাইটির সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। সুস্থ দেহে সুন্দর মন সেটা নেই, একদম হারিয়ে গেছে। তাই প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে একটা একটা খেলার মাঠ তৈরি করতে হবে।
দোকানের সামনে ময়লা থাকলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল : চট্টগ্রামকে ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিচ্ছেন বলে জানান শাহাদাত। বলেন, দোকানের সামনে একটা বিন বসিয়ে দেব। ভবন মালিকদের দায়িত্ব তাদের বাড়ির সামনের উঠান পরিষ্কার রাখা। দোকানদারদের উদ্দেশে বলেন, দোকানের সামনে কোনো ময়লা পড়ে থাকলে বিনে তুলবেন। না হয় আইনগত ব্যবস্থা নেব। আপনাদের যে ট্রেড লাইসেন্স সেটা বাতিল হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, আমি নিজেই অভিযান চালাব। আমার সঙ্গে কর্মকর্তা এবং পরিচ্ছন্নকর্মীরা থাকবেন। শাহাদাত বলেন, আমি রাজনীতি করে বড় হয়েছি।
মেমনকে হাসপাতালকে এক নম্বর হাসপাতাল বানাতে চান : ডা. শাহাদাত বলেন, একসময় দেখতাম মেমন হাসপাতালে রোগীর অভাব নেই। প্রচুর রোগী চাইল্ড অ্যান্ড ম্যাটারনাল ফ্যাসিলিটিসের জন্য আসত। এটা চট্টগ্রামে এক নাম্বার ছিল। আমি ওই এক নাম্বার জায়গায় মেমন হসপিটালকে নিতে চাই। ৪১ ওয়ার্ডে যেসব ছোট ছোট আরবান সেন্টার ডিসপেন্সারি আছে সেগুলো অ্যাক্টিভ করতে হবে। প্রয়োজনে সেখানে একটা ছোট্ট ছোট অপারেশন থিয়েটার করে দিয়ে ছোট ছোট যে সার্জারিগুলো সেখানে করতে পারি। ডিসপেনসারিগুলো আছে; এগুলো আরো অ্যাক্টিভ করতে হবে। প্রয়োজনে সেখানে একটা অপারেশন থিয়েটার করে দিয়ে ছোট ছোট যে সার্জারিগুলো হয় সেগুলো সেখানে করা হবে। দরকার হলে আমি শুধু তিন ঘণ্টা অফিসে থাকব; বাকি সময় বাইরে যাব। আমি কাজ করতে চাই এবং এই চসিককে একটা পরিবর্তনের জায়গায় নিয়ে আসতে চাই ইনশাআল্লাহ।
চসিকে রাজনীতি করবেন না : চসিকে রাজনীতি না করার ঘোষণা দিয়ে শাহাদাত বলেন, আমি রাজনীতিবিদ, তবে সে রাজনীতি কর্পোরেশনের বাইরে। আমার সমস্ত নেতাকর্মীকে বলছি, আপনারা আমাকে কাজের সময় ডিস্টার্ব করবেন না। আপনাদের সাথে আমি রাজনীতি করব সন্ধ্যা পাঁচটার পর। সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ আলাপ–আলোচনা নিয়ে আমার কাছে আসবেন না। আমি এটা স্পষ্ট করে বলছি।
সমন্বয় নিশ্চিতে চান নগর সরকার : নগরের সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করবেন বলে জানান শাহাদাত। তবে নগর সরকার প্রতিষ্ঠা হলে সমন্বয় করা সহজ হতো বলে মনে করেন তিনি। বলেন, গত ১৫–২০ দিন ঢাকাতে অবস্থান করেছি। মন্ত্রণালয়ের যারা উপদেষ্টা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবখানে বলেছি, সমন্বয়ের জন্য খুবই দরকার হচ্ছে সিটি গভমেন্ট বা নগর সরকার। যদি সিস্টেমের মধ্য দিয়ে নগর সরকার হয় তাহলে সমস্ত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় প্রতিষ্ঠিত হবে। সমস্ত সেবাদানকারী সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনা যাবে।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন এমন প্রতিষ্ঠান যেখানে মেয়র জনপ্রতিনিধি। ওই জনপ্রতিনিধির অধীনে সমস্ত সেবা প্রদানকারী সংস্থা যদি কাজ করে তাহলে পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভব। তবে এটা সিস্টেম এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এর মধ্যেই আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব যেসব সেবাপ্রদানকারী সংস্থা আছে তাদের সাথে সমন্বয় করার।
শহর আমার একার নয় : ভৌগোলিক কারণে চট্টগ্রামকে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ভাবতে হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। চট্টগ্রাম শুধু আমার একার নয়, চট্টগ্রাম আমাদের। এই স্লোগান দিয়ে আমার কার্যক্রম শুরু করব। চট্টগ্রামের প্রতি আমাদের মমত্ববোধ ও ভালোবাসা থাকতে হবে। তাহলেই আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য, সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি ও হেলদি সিটি উপহার দিতে পারব।
তিনি বলেন, আজ ৪১১ কোটি টাকার ঋণের বোঝা নিয়ে দায়িত্ব নিচ্ছি। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছি। আমি একসময় চট্টগ্রামের রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান ছিলাম। এই প্রতিষ্ঠানে যখন আমি দায়িত্ব নিই সে সময় ছোট এই প্রতিষ্ঠানটি ঋণে জর্জরিত ছিল। আমি যখন বেরিয়ে আসি তখন প্রায় ৪ কোটি টাকা ফিঙড ডিপোজিট রেখে এসেছি এবং একটি নতুন ভবন তৈরি করে দিয়েছি। আপনাদের সমস্ত চ্যালেঞ্জ আমি নিলাম। এই সিটি কর্পোরেশন একটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসাবে আমি আপনাদেরকে উপহার দেব ইনশাআল্লাহ।