সিটি করপোরেশনের সকল কাজে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক

ইচ্ছেমত কাজ করা থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত রাখতে হবে

| শুক্রবার , ১৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

নগরে সৌন্দর্যবর্ধন কর্মসূচি নিয়ে অনেক বিতর্ক। এই সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো ২০১৬ সালে জামালখান রোড ডিভাইডারে সবুজায়নের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে আরো কিছু জায়গায় স্পন্সরের বিনিময়ে বাগান ও ম্যূরালনির্ভর সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম হাতে নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কাজগুলো সব মহলে প্রশংসাও পায়। অভিনন্দন জানানো হয় মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য নগরবাসীর, সময়ের সাথে সাথে বাগানের সৌন্দর্য আড়াল হতে থাকে বাণিজ্যের থাবায়। দোকানই যেন মুখ্য হয়ে উঠে, আড়ালে চলে যায় বাগানবিলাস!
সিএনএ’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, ‘গ্রিন সিটি’ ও ‘ক্লিন সিটি’ স্লোগান দিয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। কিন্তু সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রমের এক পর্যায়ে ফুটপাত দখল করে দোকান, অ্যাকুরিয়ামের নামে অ্যাকুরিয়াম সরাঞ্জামাদির দোকান, রেস্টুরেন্ট নির্মাণসহ অপরিকল্পিত যাত্রী ছাউনির নামে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের ধুম লেগে যায়। স্বার্থসিদ্ধির সেসব স্থাপনা এখন নগরীর নানা জায়গায় বেশ দৃষ্টিকটু রূপ নিয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে। জিপিওর সামনের ফুটপাতে অহেতুক পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে দুটি যাত্রী ছাউনি। প্রতিটি ছাউনির সাথে গড়ে তোলা হয়েছে দুটি করে দোকান। যদিও জিপিওর সামনে এখন আর কোনো গণপরিবহন তেমন আর থামে না। নিউমার্কেট মোড় থেকেই গণপরিবহনগুলো ছেড়ে আসে। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, এসব যাত্রী ছাউনি কি দোকান নির্মাণের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে?
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। সবুজকে প্রাধান্য দেয়া হলে সবাই খুশি। কিন্তু সবুজকে প্রাধান্য না দিয়ে দোকান নির্মাণকে যদি প্রাধান্য দেয়া হয়, তাহলে সে ব্যাপারে সেখানেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
তাঁরা বলেন,‘নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম দেখে মনে হয় দোকানের জন্যই সৌন্দর্য, সৌন্দর্যের জন্য দোকান নয়। কিন্তু এই কার্যক্রমটি হওয়ার কথা ছিল উল্টো। সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইন করে এবং অগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে দোকান নির্মাণ করা, যেখানে সৌন্দর্যের কোনো হানি হবে না। তবেই এই কার্যক্রমটি প্রশংসিত হতো। এখন দোকানের আড়ালে পড়ে গেছে সৌন্দর্য।’
এতো সব অভিযোগের পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরের সৌন্দর্যবর্ধনে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। গত ১৭ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, নগরে সৌন্দর্যবর্ধনে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪২টি চুক্তি করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এছাড়া ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২৮ জানুয়ারি ১০টি জায়গা সেলামি ও মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে ব্যবহারের অনুমতি ও বরাদ্দ দেয়। এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ফুটপাত বরাদ্দ দিয়েছে সংস্থাটি। অভিযোগ আছে, সৌন্দর্যবর্ধন চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে এস্টেট (ভূ-সম্পত্তি) শাখা হতে কোনো নথি খোলা হয়নি। নগর পরিকল্পনা শাখার মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদিত হলেও তাদেরকে এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করার কোনো রেজুলেশনও সংরক্ষিত নাই সংস্থাটির কাছে। আবার জায়গা বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ন্যায্যমূল্যে না দেয়ার অভিযোগ আছে। কোনো ধরনের নিয়ম-নীতি না মানায় এসব অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেছেন চসিকের দায়িত্বশীলরা। এ অবস্থায় সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সৌন্দর্যবর্ধন নীতিমালা, ২০২১’ শিরোনামে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে চসিক। দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে এটিই হবে এ সংক্রান্ত প্রথম নীতিমালা। চসিকের আইন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি ইতোমধ্যে নীতিমালাটির খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। সংযোজন-বিয়োজন শেষে নীতিমালাটি চসিকের আগামী সাধারণ সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে।
শুধু নগরের সৌন্দর্যবর্ধনে নয়, সিটি করপোরেশনের নানা খাতে ইচ্ছেমত কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও স্বীকার করেছেন বিষয়টা। তিনি বলেন, নীতিমালা না থাকায় যেমন খুশি তেমন করা হয়েছে। তাই আমরা নীতিমালা প্রণয়ন করছি। মোটামুটি প্রস্তুত করে ফেলেছি। টুকটাক কিছু শব্দ চয়ন ঠিক করে তা সাধারণ সভায় উপস্থাপন করা হবে। আমরা চাই, সিটি করপোরেশনের সকল কাজে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। ইচ্ছেমত কাজ করা থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিটি মেয়রকে হতে হবে কঠোর ও নির্মোহ।
আমরা চাই, নগরবাসী এক নির্মল ও দৃষ্টিনন্দন নগরীর সন্ধান পাক। বদলে যাক চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশ। দরকার শুধু মেয়র ও সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা। সদিচ্ছা থাকলে অসম্ভবকে জয় করা সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে