ছোটবেলায় বিশ রোজার পর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা থাকতাম কখন ৩০ রোজা কবে আসবে, চাঁদ উঠবে। দোয়া করতাম যেন তাড়াতাড়ি ঈদ এসে যায়, সময় পেরিয়ে যায়, অনেক সময় ২৯ রোজায় চাঁদ ওঠা একটা অনিশ্চয়তার ব্যাপার ছিলো, আর তাই মজার। চাঁদ উঠেছে এই খবরে ইফতার করতে পারতাম না সেদিন, পানি আর দুই একটা জিনিস মুখে দিয়েই দৌড়। পিছন থেকে বলত, এই দাঁড়া, এই দাঁড়া। কে শোনে কার কথা? আমাদের বাড়ির পাশে অনেকগুলো বড় বড় মাঠ ছিলো। চাঁদ দেখতাম বড় মাঠে গিয়ে। এখন আর সেই মাঠগুলো নেই। সেই মাঠ এখনো বড় বড় অট্টালিকা ভরে গেছে, কিন্ত আমরা এখন আর কতদিন চাঁদ দেখি না। চাঁদ উঠলে আমরা বাজি ফুটাতাম, তারাবাতি জ্বালাতাম। কি যে খুশি লাগতো, মসজিদে মসজিদে আল্লাহু আল্লাহু ধ্বনি শোনা যেত অসাধারণ সেই সুর, কিছুক্ষণ পর পর হুজুরের জানিয়ে দেয়া ঈদের জামাতের সময়। সবার বাসা থেকে আসত রান্নার সুগন্ধি। ঈদের দিন মা গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে দিতেন, বাবা সাথে নামাজ পড়তে যেতাম, নামাজ শেষে চাচা জেঠা আত্মীয় স্বজনের বাসায় যেতে সালাম করে ঈদি নিতাম, যখন কেউ ঈদি দিতে ভুলে যেতেন বারবার সালাম করতাম সিকি পয়সার ঈদি লক্ষ টাকা খুশী ছিলো। এখনকার ছেলে মেয়েদের হাজার টাকা ঈদি দিলে মনে হয় সেই আনন্দ পায় না, যেটা আমরা পাইতাম। এখনো ঈদে অনেক আনন্দ আছে, আর সেইটা হচ্ছে আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের। কিন্তু ছোট বেলার সেই আনন্দটা আর নেই। সবাইকে ঈদ মোবারক।