একটি কোম্পানিকে কোভিড মহামারীর সময়কার প্রণোদনার ঋণের ৪০৪ কোটি টাকা আত্মসাতে সহায়তার অভিযোগে সিকদার পরিবারের চার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলায় সিকদার পরিবারের মনোয়ারা সিকদার, পারভীন হক সিকদার, রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদারকে আসামি করা হয়েছে। যারা ওই সময় ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা হওয়ার তথ্য দিয়েছেন কমিশনের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, সংস্থার উপপরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডল বৃহস্পতিবার (গতকাল) এ মামলা করেন।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ‘আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামির তালিকায় ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক পরিচালকদের মধ্যে আরও রয়েছেন খলিলুর রহমান, মাবরুর হোসেন, মো. নায়মুজ্জামান ভুইয়া মুক্তা, মোয়াজ্জেম হোসেন ও বর্তমান পরিচালক জাকারিয়া তাহের। এদের মধ্যে নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। খবর বিডিনিউজের।
এতে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে মো. একরামুল হক (ইভিপি ও শাখা ব্যবস্থাপক), মো. হাবিবুর রহমান (এসইভিপি ও শাখা ব্যবস্থাপক), মোহাম্মদ আবু রাশেদ নোয়াব (ভিপি, ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন–১), এএসএম বুলবুল (উপব্যবস্থাপনা পরিচালক) ও চৌধুরী মোশতাক আহমেদ ওরফে সিএম আহমেদকে (ব্যবস্থাপনা পরিচালক)। এছাড়া আসামির তালিকায় আছেন সাদ মুসা হোমটেক্স অ্যান্ড ক্লথিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোহসিন এবং রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী।
মামলার এজাহারে অভিযোগ, মোহাম্মদ মোহসিন ও মঈন উদ্দিন পরস্পরের যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেন এবং যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই প্রণোদনার ঋণ গ্রহণ করেন। ন্যাশনাল ব্যাংকের তৎকালীন শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রকৃত আর্থিক প্রয়োজন যাচাই না করেই প্রণোদনার আওতায় রেডিয়াম কম্পোজিটকে ৪০৪ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেন।
অনুসন্ধানের বরাতে দুদক বলছে, এই অর্থ একাধিক লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে মোহাম্মদ মোহসিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়। স্থানান্তরিত অর্থ দিয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে চারটি বাণিজ্যিক ফ্লোর কেনা হয়, সাদ মুসা গ্রুপের আগের ঋণ ও কিস্তি পরিশোধ করা হয় এবং এলসির দায় মেটানো হয়। এভাবে ঋণের শর্ত ভেঙে অর্থ আত্মসাৎ এবং মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে দুদক।
দুদক বলছে, রেডিয়াম কম্পোজিটের নামে মোট ৪০৪ কোটি টাকার সিসি (হাইপো), টার্ম লোন ও প্রণোদনার ঋণ অনুমোদন হয়। এর মধ্যে ৩৭৪ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয় অন্য কোম্পানিতে। ঋণের অর্থ ফেরত না আসায় ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৫৩৩ কোটি টাকায়।
২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর মোহসিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। ২০০৯ সালের পর থেকে দীর্ঘদিন ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সিকদার গ্রুপের একক নিয়ন্ত্রণে ছিল।