চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ২২০টি অস্ত্রের হদিস আজও মিলেনি। তবে প্রতিদিন কয়েকটি করে অস্ত্র থানায় এসে জমা দেওয়া হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে হদিশ না থাকা অস্ত্রগুলো থানায় জমা হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এরপরও কোনো অস্ত্র পাওয়া না গেলে সেগুলো উদ্ধারের জন্য যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। নগর পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র যে কোনো মূল্যে উদ্ধার করা হবে বলে সিএমপি সূত্র জানিয়েছে।
অপরদিকে সিএমপির ষোলটি থানার মধ্যে চারটি পুরোপুরি ভস্মীভূতসহ মোট ২৯টি পুলিশি স্থাপনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশের ডাবল কেবিন পিকআপ, সিঙ্গেল কেবিন পিকআপসহ ২৯টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ৩৫টি গাড়ি, ১২টি মোটরসাইকেল লুট করে নিয়ে গেছে। কোটা আন্দোলন ইস্যু পরবর্তী গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর বিক্ষুদ্ধ মানুষের হামলায় সিএমপির অন্তত ২০ কোটি টাকার সম্পদহানি হয়েছে।
সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম গতকাল আজাদীকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা এক থানার জিনিস অন্য থানায় কিংবা এক ইউনিট থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী অন্য ইউনিটে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি। সিএমপির ১৬টি থানা পুরোপুরি কার্যকর এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ দিতে চাই এই নগরীর মানুষকে। পুলিশ না থাকার পরও তারা শহরে বড় ধরনের কোনো অরাজকতা করেননি। চুরি–ডাকাতি, খুন–ধর্ষণের মতো অপরাধের ঘটনা ঘটাননি। এটা চট্টগ্রামের মানুষের সহনশীলতা। সিএমপি সূত্র জানিয়েছে, সরকার পতনের পর বিক্ষুদ্ধ জনতা নগরীর থানাসহ বিভিন্ন পুলিশি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং লুটতরাজ চালায়। আগুন দেওয়া হয় অনেকগুলো থানা, পুলিশ ফাঁড়ি এবং পুলিশ বঙসহ ২৯টি স্থাপনায়। এর মধ্যে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরে নগরীর কোতোয়ালী থানা, পাহাড়তলী থানা, পতেঙ্গা মডেল থানা, ইপিজেড থানা, মধ্যম হালিশহর পুলিশ ফাঁড়ি, বহদ্দারহাট পুলিশ বঙ, মোহরা পুলিশ বঙ, বায়েজিদ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। এছাড়া চান্দগাঁও থানা, ডবলমুরিং থানা, হালিশহর থানা, আকবর শাহ থানা, সদরঘাট থানা, সদরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, পাথরঘাটা পুলিশ ফাঁড়ি, টাইগারপাস পুলিশ বঙ, দামপাড়া ওয়াসা মোড় ট্রাফিক পুলিশ বঙ, সিটি গেট চেকপোস্ট, দামপাড়া পুলিশ লাইন, নিউ মার্কেট মোড় ট্রাফিক পুলিশ বঙ, খুলশী ট্রাফিক পুলিশ বঙ ভাঙচুর করা হয়। হামলার শিকার হওয়া পুলিশি স্থাপনাগুলো থেকে অনেক অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অবশ্য গত ৮ আগস্ট অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন এবং পুলিশের কাজে যোগ দেওয়ার পর অনেক মানুষ তাদের কাছে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় এসে জমা দিয়ে যাচ্ছেন। গতকালও অন্তত ৫টি অস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। র্যাব সদস্যরা সিএমপি থেকে লুট করা বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।
সিএমপির বিভিন্ন থানা এবং ফাঁড়ি থেকে লুট করা অস্ত্রগুলোর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২২০টি অস্ত্রের হদিশ মিলেনি। তবে সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যেভাবে প্রতিদিন লুট হওয়া অস্ত্র থানায় জমা দেওয়া হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আগামী দিন কয়েকের মধ্যে সব অস্ত্রই জমা হয়ে যাবে। অনেকে না বুঝে অস্ত্র নিয়ে চলে গেছেন। এখন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে থানায় জমা দিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আগুন লাগায় অস্ত্র পুড়ে যাবে শঙ্কা থেকেও অস্ত্রগুলো নিয়ে যান। তারাও ফেরত দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা চট্টগ্রামের মানুষের এই মানসিকতাকে সম্মান দিয়ে আশা করছি, এখনো যেসব অস্ত্র থানায় জমা দেওয়া হয়নি, সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে জমা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এরপরও যদি কোনো অস্ত্র জমা না হয় তাহলে আমরা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করব। পুলিশের অস্ত্র তো আর সন্ত্রাসীদের হাতে থাকতে পারে না।
সিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের অন্তত ২০ কোটি টাকার সম্পদহানি হয়েছে। এগুলো গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টসে জানিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
সিএমপির থানাসহ বিভিন্ন ইউনিটের গাড়ি এবং থানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি সামলে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ভাড়ায় কয়েকটি গাড়ি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে দিয়েছি। আবার কিছু কিছু সামগ্রী এক ইউনিট থেকে নিয়ে অন্য ইউনিটের কাজ চালাচ্ছি। এখন থানাগুলোতে মামলা রেকর্ডসহ যাবতীয় পুলিশি সেবা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশি কার্যক্রম পুরোপুরি গতিশীল করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রামের মানুষ অনেক ভালো বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, থানাগুলো অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ না থাকা স্বত্ত্বেও শহরের কোথাও বড় কোন অঘটন ঘটেনি।