চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের অবৈধ সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ জেবুন্নেছা কামরুল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকার উক্ত সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার এ আদেশ দেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উক্ত ১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার মধ্যে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকার সম্পদের ভোগ দখলে আছেন কামরুল হাসান আর ১ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার সম্পদ তার স্ত্রী সায়মা বেগম ভোগ দখলে আছেন।
দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা অবৈধ সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ঘুষ গ্রহণ ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে গত মাসে দুদক প্রধান কার্যালয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক চট্টগ্রাম–২ কার্যালয়। সেখানে কামরুল ও তার স্ত্রীর পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির সুপারিশ চাওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুদক প্রধান কার্যালয় এ দম্পতির নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করতে আদালতে আবেদন দাখিলের জন্য সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। কামরুল ও তার স্ত্রীর ঘুষ গ্রহণ ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটির অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–২ এর সহকারী পরিচালক এমরান হোসেন।
সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ চেয়ে আদালতে করা আবেদনে দুদক কর্মকর্তা এমরান হোসেন উল্লেখ করেন, সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারীর সুপারিশ চেয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের পর থেকে কামরুল ও তার স্ত্রী তাদের ভোগ দখলে থাকা অবৈধ সম্পদ হস্তান্তর, বিক্রির চেষ্টা করছেন। এ জন্য উক্ত সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
আদালতসূত্র জানায়, কামরুল হাসান ১৯৮৯ সালে সাব–ইন্সপেক্টর পদে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন। চাকরির ধারাবাহিকতায় পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) হিসেবে সিএমপিতে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি প্রসিকিউশন শাখায় কর্মরত ছিলেন। তারও আগে হাটহাজারী, বাঁশখালীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় তিনি কর্মরত ছিলেন।
দুদকের নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের নামে ১২ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৫ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ২১৬ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার ৯১১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। একই সময়ে তার মোট ৭০ লাখ ২৮ হাজার ২৪১ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার ১৫২ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া গেছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৩২ হাজার ৮৭ টাকা। এক্ষেত্রে তার অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার বৈধ আয়ের উৎস ৯ কোটি ৮৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ টাকা কম পাওয়া গেছে। অর্থাৎ তার নামে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। একইভাবে কামরুল হাসানের স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে ১ কোটি ২৫ হাজা টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ২৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২ কোটি ৫৩ হাজার ২৪০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। উক্ত সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি তার ২৮ লাখ ৯০ হাজার ২৭৪ টাকা দায় বা ঋণ থাকার তথ্য রয়েছে। দায় বাদে তার ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৬ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। এছাড়া, একই সময়ে তার মোট ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৫৫ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের তথ্য রয়েছে। অর্থাৎ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২১ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া গেছে ৪০ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৩ টাকা। এক্ষেত্রে তার অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার বৈধ আয়ের উৎস ১ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকা কম পাওয়া গেছে। তিনি ১ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
দুদকের নথিপত্রে কামরুল হাসানের স্থাবর সম্পদ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, নগরীর পাহাড়তলীতে কামরুল হাসানের নামে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া উক্ত এলাকায় তার নামে আরো একাধিক জমি রয়েছে। খুলশীর ডিআইজি অফিসের পাশে রয়েছে ২ হাজার ৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। চান্দগাঁও মৌজার অনন্যা আবাসিক এলাকায় ৩১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকার প্লট রয়েছে। ঢাকার সাভারে সিটি সেন্টার ও সাভার সিটি টাওয়ার নামে দুটি মার্কেটে মালিকানা রয়েছে কামরুল হাসানের। অস্থাবর সম্পদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, কামরুলের ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। তার স্ত্রীর বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। এছাড়া তার স্ত্রীর নামে এম ভি প্যাসিপিক রাইডার, এম ভি পানামা ফরেস্ট–১, এমভি রাইসা তারাননুম ও বার্জ আল বাইয়েৎ নামের রয়েছে চারটি নৌযান (বার্জ) রয়েছে। দুদকসূত্র জানায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে কামরুল দম্পতি দুদক আইনের ২৬ (১) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।